ভারতেঃ শৌচালয় বনাম প্রযুক্তি
আমার লেখার টাইটেল পড়ে, আপাত দৃষ্টিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নিয়ে কটূক্তি কিংবা হাঁসির অনেক উপকরণ মিলবে ভাবলে, আপনি হয়তো আমার এ লেখাটি পড়ে বেশ হতাশ হতে পারেন ।
আসলে আমি নিজেও ব্যক্তি হিসেবে, ক্রিকেট প্রসঙ্গে কিংবা আমাদের দেশীয় রাজনৈতিক প্রসঙ্গে, ভারতের নবাবগিরির ঘোর বিরোধী । তবে কিছু সত্য স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই, এমনকি সেটা যদি ঘোর শত্রুর পক্ষে যায় তবুও ।
আজকের আলোচনায় আপনাকে এমন কিছু তথ্য জানাবো, যার প্রতিটা জেনে আপনাকে গুগল করতে হতে পারে । কারণ, আপনি প্রথমে ব্যাপারটা হয়তো মানতেই পারবেন না যে, প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের শৌচালয় প্রসঙ্গে এত পিছিয়ে থেকেও, প্রযুক্তিতে এত অভাবনীয় উন্নতি করেছে কিভাবে; যেটি ঈর্ষনীয় তো বটেই!
ভারতীয়দের নিয়ে কটূক্তি করার সবচেয়ে সস্তা কথা হলো, ভারতীয়দের উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যা আজও খোলা যায়গায় পায়খানা করে । মজার ব্যাপার হলো, এ বিষয়ে আমার এক ভারতীয় সহপাঠী আশুতোষ ও একমত, বিনা অভিযোগী, এক বাক্যে স্বীকার করে নিল ব্যাপারটা । এমনকি বাংলাদেশ, পাকিস্তানের চেয়েও এ খাতে তারা বেশ পিছিয়ে । তবে বর্তমানে রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রচার-প্রচরনা, এমনকি টয়লেট নিয়ে সম্প্রতি অক্ষয় খানের 'টয়লেট' নামক সিনেমাটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে; সেইসাথে সমাজ সচেতনা বাড়তেও বেশ ভালো অবদান রাখছে ।
প্রতিবেশী দেশ নিয়ে আমাদের বেশিরভাগ লোকেদের জ্ঞান ওই পর্যন্তই, মানে যতটুকু জানলে তাদের ছোট করে রাখা যায় আর কি । কিন্তু গত কয়েক দশকে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ভারতীয়রা কোথায় পৌছে গেছে, সেটা জানেন তো? তবে আমি আপনাকে বিস্তারিত কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করছি (রেফেরেন্স সহ); দয়া করে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করার আগে, আমার কথাগুলো মিলিয়ে নেবেন ।
১. Indian Space Research Organisation (ISRO), ‘চন্দ্রায়ন-১’ নামে, চাঁদে প্রথম সফলভাবে মিশন পাঠায় ২২শে অক্টোবর ২০০৮ সালে । ‘চন্দ্রায়ন-২’ মিশন জানুয়ারি ৩, ২০১৯-শে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে । References: [1]&[2]
২. মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে ISRO এর পাঠানো প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ 'মঙ্গলায়ন' । উৎক্ষেপিত হয় ৫-ই নভেম্বর ২০১৩ সালে যা ২৪ শে সেপ্টেম্বর ২০১৪ সাল থেকে মঙ্গলের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করছে । এই স্পেইস মিশনটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তার কারণ, এটি এযাবতকালীন সবচেয়ে সস্তা বাজেটের এবং প্রথম বারের চেষ্টায় নভোমণ্ডলে পরিচালিত, সফল একটি অভিযান ছিল । অর্থাৎ, আমেরিকা এবং রাশিয়া সহ ইউরোপীয়রা, ভারতীয়দের আগে মঙ্গলে স্পেইস মিশন পাঠালেও এদের কেউই প্রথমবারের চেষ্টায় সফল হয় নাই । এছাড়া খরচের দিক থেকে ভারতীয় মিশনের চেয়ে আমেরিকান এবং রাশিয়ান মিশনগুলো ছিল বহুগুণে ব্যয়বহুল । এমনকি মঙ্গল অভিযানের উপর নির্মিত হলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা 'গ্রাভিটি' নির্মানে যে ব্যয় হয়, তার চেয়ে ভারতীয় মিশনের খরচা ছিল অনেকাংশে কম । Reference: [3]
৩. ভারতের India's Defence Research and Development Organisation (DRDO) এবং রশিয়ার Russian Federation's NPO Mashinostroyeniya-এর যৌথ উদ্যোগে সুপারসনিক ক্রুইস মিসাইল 'ব্রাহ্মস' তৈরি হয়, যেটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুতগামী ক্রুইস মিসাইল হিসেবে রেকর্ড ধারণ করে আছে (গতিবেগ ৩৪০০-৩৭০০ কি.মি./ঘন্টা)। আর এই মিশাইলের বিশেষত্ব হলো, ভূপৃষ্ঠের খুব অল্প উপর দিয়ে চলতে পারে (মাত্র ৩ থেকে ৪ মিটার), যাকে শক্তিশালী কোনো রাডারও সনাক্ত করতে পারবে না । বর্তমানে গবেষকদল গবেষণাগারে হাইপারসনিক ভার্সন, মানে আর বেশি উচ্চগতি সম্পন্ন মিসাইল 'ব্রাহ্মস-২' নিয়ে কাজ করছে । তারা আশাবাদী যে, ২০২০ সাল নাগাদ তারা এই কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করতে পারবে । Reference: [4]
৪. আপনি কি জানেন, ভারত পারমানবিক অস্ত্র সম্পন্ন একটি দেশ । যেখানে সারা বিশ্ব আমেরিকার সাথে ইরান এবং নর্থ কোরিয়ায় পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে এত গুঞ্জন অবলোকন করছে, সেখানে ১৯৯৮ সালে, ভারত, অনেক গোপনীয়ভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'পোখরা রেইঞ্জে', পর পর পাঁচটি সিরিজ পারমানবিক বোমার সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করে । ওইদিনে বিশাল এলাকা জুড়ে ,পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণে, এতটায় ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়েছিল যে, আমেরিকান United States Geological Survey (USGS) ডিপার্টমেন্ট, উক্ত ঘটনাকে পাকিস্তান সীমান্তে ছোট মাত্রার ভূমিকম্প বলে প্রচার করে । অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনামলে সম্পন্ন, সেই বিশেষ পারমানবিক বোমার গোপন পরীক্ষা নিয়ে আরও বেশি জানতে আগ্রহী হোলে, এই মিশনের উপর নির্মিত, জন আব্রাহাম আভিনীত চলচিত্র 'পরমাণু' দেখে ফেলতে পারেন । Reference: [5]
মহাকাশ প্রযুক্তি এবং মিলিটারি সক্ষমতা নিয়ে তো জানলাম, এবার আসি আরেকটা মোক্ষম বিষয়ে, তা হলো- Research and Analysis Wing (RAW), Intelligence agency of India। যেটি সারা দুনিয়া ব্যাপী চষে বেড়ানো নম্বর ওয়ানঃ MOSAAD, Intelligence agency of Israil and FBI, Intelligence agency of USA, ওদের পরেই শক্তিশালী স্পাই (গুপ্তচর) ভিত্তিক অর্গানাইজেশন হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত । উপমহাদেশের এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে RAW এর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই । তারা এতটায় শক্তিশালী যে, তাঁরা কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝতে হোলে, আপনাকে 'RAAZI' নামক সম্প্রতি একটি হিন্দি সিনেমা রিলিজ হয়েছে, তা দেখে নিতে হবে । RAW নিয়ে আর কি বলবো, গত কয়েকটা দিন আগে, মালদ্বীপের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী দলের নামের বদলে প্রথম আলোতে হেড লাইন দেখলাম, সেখানে লেখা 'মালদ্বীপে ভারতের কাছে চীনের পরাজয়' । অর্থাৎ, তাদের জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে RAW তাদের পছন্দের দলকে জয়ী করতে কাজ করেছে এবং তারা সফলভাবে সেটা করতে পেরেছে বলে বিভিন্ন অন্তর্জাতিক নিউজ মিডিয়ায় খবর এসেছে । একইভাবে আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে, RAW এর সম্পৃক্ততা অস্বীকার করার উপায় নেই ।
এত গেল, হাইটেক প্রযুক্তি এবং RAW নিয়ে কথা, এবার আসি সারাবিশ্বে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে ভারতীয়দের সফলতার গল্পে-
* গুগলের বর্তমান CEO, সুন্দর পিচাই [6], একজন ভারতীয়।
* সত্য নাদেলা, CEO, Microsoft [7], একজন ভারতীয় ।
* সন্তানু নারায়ণ, CEO, Adobe [7] একজন ভারতীয় ।
* সম্প্রতি ডিভা সুরিয়াদেভারা (Dhivya Suryadevara) নামের এক ভারতীয় নারী, প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IFC) এর প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (CFO) হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন [8]।
* তাছাড়া সারা দুনিয়ায় বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে, বহু ভারতীয় প্রফেসরকে দেখবেন, যারা অনেকেই তাদের নিজ নিজ ফিল্ডে খুবই নামকরা ।
* Jaguar Land Rover গাড়ীর ব্র্যান্ডের নাম শুনে অবাক হচ্ছেন? এটি ২০০৮ সালের জুন মাসের পর ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে সম্পুর্ন স্বত্ব কিনে নিয়েছে ভারতের টাটা মটরস । আর মোটর বাইকের কথা আর কি বলবো, আমাদের দেশে ছেলেদের আজকাল ফ্যাশনের তালিকায় যে বাইকগুলো দেখেন, তার সিংহভাগ আসে ভারত থেকে, এতে অস্বীকার করার উপায় নেই [9]।
পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতিই কিছু না কিছু স্বতন্ত্র গুণাবলীর কারণে আলাদাভাবে পরিচিত । যেমন কেউবা সহজ-সরল, অতিমাত্রায় আবেগী, কেউ কেউ ভীষণ স্বার্থপর, কেউবা হিংসুটে ও নিষ্ঠুর, কেউবা মানুষরূপী মেশিনের মত পরিশ্রমী, আবার কেউবা অত্যন্ত চালাক, মেধাবী এবং সৃষ্টিশীল । ভালো-মন্দ মিলেমিশেই সাত রঙ্গা রং ধনুর ন্যায় আমরা একেক মানসিকতার মানুষ হিসেবে ধীরে ধীরে সমাজে বেড়ে উঠি । যেখানে ভৌগলিক পরিবেশ, ধর্মীয় অনুশাসন এবং পারিবারিক শিক্ষা কিংবা হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, এমনকি আমাদের খাদ্যাভ্যাস কিংবা রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার দ্বারাও আমাদের বিবেক, মনুষত্যবোধের গোড়া পত্তন হয় । তবে বলতে দ্বিধা নেই, আমি ঈর্ষা করি একজন ভারতীয় সহপাঠীকে, তাঁর অসীম দেশপ্রেম এবং নিজ দেশের প্রতি ডেডিকেশন দেখে । আমার মনে হয়, সমৃদ্ধির জন্য অন্য দেশের নাগরিকদের কাছেও আমাদের কিছু না কিছু শেখার আছে ।
লেখাটি পড়ে ভাবছেন, দুনিয়ায় এতসব বিষয় থাকতে, আমার হঠাৎ এত ভারত প্রীতি কেন? আসলে আপনি যদি চালাক লোক বলে নিজেকে দাবি করেন, তবে শত্রুর শক্তি এবং দুর্বলতা উভয় বিষয়ে বেশি বেশি জানার চেষ্টা করুন । মিথ্যে এবং সস্তা আবেগী কটূক্তি দিয়ে সাময়িক হৃদয়ের জালা মেটানো যায়, কিন্তু শত্রু পক্ষকে প্রতিহত করা যায় না । আর প্রকৃত মানুষ তার প্রতিপক্ষের গুণাবলীকে অস্বীকার করার মত স্পর্ধা দেখায় না, বরং সম্মান প্রদর্শন করে এবং মনে মনে পণ করে যাতে প্রতিপক্ষের সামনে নিজেকে অধিক গুণাবলী নিয়ে, গর্বের সাথে, শক্ত ভিত নিয়ে একদিন দাঁড়াতে পারে।
উপরের আলোচনায় উল্লেখিত তথ্যসূত্রের তালিকা নীচেঃ
[1.] https://g.co/kgs/nQXA7n
[2.] http://www.planetary.org/…/0813-chandrayaan-2-launch-delaye…
[3.] https://en.wikipedia.org/wiki/Mars_Orbiter_Mission
[4.] https://en.wikipedia.org/wiki/BrahMos\
[5.] https://en.wikipedia.org/wiki/Pokhran-II
[6.] https://en.wikipedia.org/wiki/Sundar_Pichai
[7.] http://www.rediff.com/…/pix-special-meet-the-i…/20150811.htm
[8.] https://qz.com/…/gm-appoints-india-born-dhivya-suryadevara…/
[9.] https://en.wikipedia.org/wiki/Tata_Motors
২০৮০ সালের মহামারীর নেপথ্যে (একটি সম্পুর্ন কল্পকাহিনীঃ পর্ব-১)
আবু হাশনাত বাদশা (তারিখ ২৪ শে মার্চ ২০১৫ )
ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ, মার্চের প্রথম সপ্তাহ যখন সারাদেশে মহামারীর মত মানুষ মারা যাচ্ছে । অতি সামান্য অসুখে এমনকি কাটা ছেঁড়ার মত রোগ-বালাই মানুষের মরন ব্যধিতে রুপ নিচ্ছে । শুধু ঢাকাতেই বিভিন্ন হাসপাতালে একদিনে ২৫০০এর উপরে লোক মারা গেছে । সারা বিশ্বের সমস্ত খ্যাতিমান গমাধ্যমের শিরোনাম হিসেবে খবর ছাপা হয়েছে । চারিদিকে আতংক বিরাজ করছে । সারা বিশ্বের সায়েন্টিফিক কমিউনিটি-এর ভয়াবহতা কিছুটা আগের থেকে আঁচ করতে পারলেও তাদের পক্ষে এত দ্রুত তেমন কিছুই করা সম্ভবপর ছিলনা । আসলে, অনুন্নত দেশে প্রচলীত রোগপ্রতিরোধক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার খুবই অনিয়ন্ত্রিত । আর এসব অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা প্রয়োগের ফলে বেশিরভাগ রোগ জীবানু যেমন ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস প্রচলীত অ্যান্টিবায়োটিকের বিপরীতে প্রতিরোধী শক্তি অর্জন করে ফেলেছে । আর তারই ফলশ্রুতিতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে আজ গোটা জাতিকে ।
গত রাতে পরীক্ষাগারে জটিল একটা এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কাজ করতে করতে মিস্টার বোস টেবিলের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছেন । হাতের কাছে মোবাইল ফোন কিনবা এলার্ম ঘড়িটা না থাকায় কোনরুপ অসঙ্গতি ছাড়ায় দিব্বি ঘুমিয়ে যাচ্ছেন । দিনটাও ছিল রোববার তাই সভাবতই সেদিন সকালে অফিস করতে কোনো কর্মচারীও আসেনি । তখন বেলা ১০ টা, হঠাৎ একটা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে মিঃ বোস চোখ মেলার চেস্টা করলেন । আসলে টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা ঘুমের ঘোরে বাম হাতের ধাক্কা খেয়ে পড়ে মুহুর্তেই মেঝের উপর টুকরো টুকরো হয়ে গেলো । কিন্তু, মিস্টার বোস প্রথম ৩০ সেকেন্ডে কিছুই ঠাউরে উঠতে পারলেন না । হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে হতভম্ব ভাবে বোঝার চেস্টায় করে যাচ্ছিলেন- তিনি এখন কোথায়? কিনবা কি ঘটতে যাচ্ছে এসব আর কি । ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোগুলো থেকে এমনভাবে আলোক রশ্মী ঝলমল করে তার চোখের উপর ধেয়ে আসছিলো যে, তা ছোটোবেলার কেচ্ছা কাহীনির সেই রুপকথার রাজ্যে মনিমুক্তা আর হীরা-জহরতের কথায় মনে করে দিচ্ছিল । যাহোউক, ক্লান্ত শরীরে ল্যাব থেকে সোজা বাসায় । কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ড্রয়িং রুমে ভার্চুয়াল ওয়ালে চোখের ইশারায় কমান্ড দিতেই বিশাল টিভির স্ক্রিনে একের পর এক নিউজ চোখে পড়লো । ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে তার এতটুকুও দেরি হোলনা । হবেই বা কেন কারন, প্রফেসর কার্লস লোপেজ এর অধীনে তার বর্তমান গবেষনার বিষয়বস্তু এবং তার উপরে লিখিত একটি প্রবন্ধ 'দ্য ন্যাচার' নামক বিশ্বের ক্ষ্যতিমান বৈজ্ঞানিক জার্নাল-এ প্রকাশ করে সারা পৃথিবীতে আলোড়োন ফেলে দিয়েছেন । যেখানে সে মহামারীর ভয়াবহতা সম্পর্কে একটা ধারনা দেওয়া হয়েছে । যেমন উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রধান সমস্যা হলো ঔষধ এর যথেচ্ছা ব্যবহার । যেমন আমাদের সামান্য সর্দি কাশি কিনবা জর হলেই নিজেই বড় ডক্টর বনে যায় । আর ডিস্পেন্সারী থেকে ইচ্ছে মত ঔষধ সেবন করে থাকি । এক্ষেত্রে সরকারী নিতিমালারও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে সেই সাথে মানুষের মধ্যে সচেতনাতার অভাবও অন্যতম একটা কারন । তাছাড়া গ্রামে হাতুড়ে চিকিতসকদের যোগ্যতা সম্পর্কে আমরা কম বেশী সবাই ওয়াকিবহাল । আর সেই সব কারনে ঔষধের যথেচ্ছা প্রয়োগে মানব দেহে বাসা বাঁধা রোগ-জীবানু প্রতিরোধী হয়ে উঠছে । তবে কি এই সময় মেডিসিনের ডেভেলপমেন্ট থমকে ছিলো? ব্যাপারটি আসলে তা নয় কারন, যেসব প্রতিষ্ঠান নিত্য নতুন ঔষধ প্রস্তুত ও গবেষনা করে থাকে সে সকল উন্নত দেশে সরকারী নিয়োমনীতি খুব কঠিন এবং চিকিৎসা ব্যাবস্থাও উন্নতর । সেইসাথে তারা আত্তসচেতন বলে সেসব দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ব্যবহার একেবারেই অসম্ভব । বিশেষ করে প্রেসক্রিপ্সন ছাড়া সাধারন ঔষধ ক্রয় করাও কঠিন । তাতে করে তাদের দেশে প্রেক্ষাপট সম্পুর্ন ভিন্ন । একারনে, সেখানে প্রচলিত ঔষধ এখনো সমান ভাবে কার্যকরী । তাছাড়া নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ডেভেলপমেন্টের দিকে তাদের নজর তুলনামুলক ভাবে কম ছিল। বরং, গত দুই দশকে ইউরোপ, আমেরিকার বড় বড় গবেষনা প্রতিষ্ঠানগুলো এইচআইভি, এবোলা আর হার্ট সহ নানান গুরুতর রোগ বালাই এর প্রতিশেধক আর ক্লোন উদ্ভাবনেই বেশি সময় এবং অর্থ ব্যায় করেছে । তাছাড়া সেসব গবেষনার তাদের সফলতাও কম নয় যেমন, ২০৪৫ সালের ক্যান্সার এবং ২০৬২ তে সর্বপ্রথম এইচআইভি এর প্রতিষেধক আবিস্কার অন্যতম । সেই সাথে মানুষের শরীরে নতুন কিছু মরন ব্যাধীও জন্ম নিতে শুরু করেছে যেমনঃ 'অসটিগমাটিজম-৪' । এটি নতুন এক ভাইরাস জনিত চোখের রোগ । যার বেসির ভাগই অতিমাত্রায় ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর ডিভাইস ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে । কারন ডিজিটাল যুগে জন্মের পর থেকে একটা মানুষ যে পরিমান ডিজিটাল ডিসপ্লে যেমন স্মার্টফোন, কম্পিউটার এর উপর চোখ রাখে তাতে করে চোখের পাতার সাভাবিক ব্লিঙ্কিং ফ্রিকুয়েন্সি ব্যহত হয় । যার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের পানি পড়তে শুরু করে কিন্তু, এরপর চোখের পীপ হোল থেকে রক্ত খরন এবং পরিশেষে চোখের পাতা পারালাইজড হয়ে পড়ে । এতে করে রোগী ক্লান্ত থাকলেও রাতের বেলা ঘুমের সময় চোখের পাতা বুজতে পারেনা । যে কারনে ঘুমহীন শরীরে যে ক্লান্তি থাকে তা কোন অবস্থাতেই লাঘব হয়না । আর যার ভহাবহ পরিনীতি অকাল মৃত্যু । গত দশকে এর পরিমান যে হারে বেড়ে চলেছে সেটাও খুব ভয়াবহ । এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে বর্তমানে ১২ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রাই ৩ বিলিয়ন মানুষ তার জীবনের কোন না কোন স্টেইজে এ রোগের দারা আক্রান্ত হবার সম্ভনা আছে । প্রতিবছর এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে মিলিয়ন লোক মারা যাচ্ছে আর প্রতিবছর তা জ্যামেতিক হারে বেড়েই চলেছে ।
চলবে.………