A Trip Toward The Horizon


I could not find a home after roaming around the whole day. Losing taste of food after hearing the flat rent, my throat is getting dry. Monthly minimum $1700 (about 150 thousand in my currency). And more, the rent for those luxury apartments is 3 to 5 thousand US dollars. And then there is more irony. More than two people (not even their child) are allowed to stay in a two-room apartment: such a weird renting policy that I have ever heard of. They even counted the head of my 10-year-old daughter. Since we are three, they won't rent a house to us, lol.

However, when the North Pole, including Canada, and many cities in the USA are shaking in the winter, here is the mood of spring. The temperature is so beautiful all year long, I mean spring is here for 12 months. While walking on the street, I felt like, there is a divine feeling with the sweet sun.

Of course, I'm talking about one of the southern cities of California called San Luis Obispo. Believe me, the weather in this city is something else. I don't believe there is any better place to live than this place on earth; at least, I do not know in my experience. Just brought 11 months assignment to this city. Maybe I have to leave later, but it will be hard to forget such a beautiful environment.

Started touring on Jan 5th, and, today, I stopped in San Luis Obispo, one of the southern counties of California. My trip ends here for the next 11 months.

I have never posted so many photos on my Facebook before. But in the last few days, I have visited such amazing places, e.g., Grand Canyon and Death Valley, which I could not resist sharing. But one thing is being noticed by many, the background of my photos is being changed with time, whereas my clothes are not. That's because, for the last few days, I've been in the same dress in all the pictures. This is very true. I'm not miserable, but I don't want to buy myself anything for luxury. I love to have very few clothes for myself. Sometimes my wife forcefully buys some clothes for me. It is not that I am lacking money to buy some stuff, I do it intentionally. Because I prefer living simply with minimum things which I need.

Let me tell you a story about my few clothes—when I was home in October, one day, I went to see my bosom friend. Started from my father-in-law’s house with a rented motorcycle, while on the way, some mud sprinkled from the motorcycle's wheel and washed my pants, I fell into trouble. So, taking out another pair of clothes from my bag, wearing that, put wet pants in a polythene bag, and headed toward my friend’s house. Once I arrived there, first, I went to the roof to dry my wet pants. Seeing this, my friend laughed and was surprised, too. I told him, friend, I only have one pair of pants, so I brought wet pants with me. Now if it doesn't dry, what will I go out later tomorrow.

May my future life be so simple as it is now, never be filled with luxury, that I wish from my heart.

My long trip since the last few days actually was not a fun trip rather was an assignment given by my office. We had the responsibility of delivering a piece of scientific equipment at a great distance of three thousand miles by driving a moving truck. Basically, we were moving the setup that I will be using in the next 11 months.

Fortunately, I had an American colleague with me named Kevin to drive the truck. Kevin is such a nice person that I ever met in my life. He is a father of two sons and an adorable daughter with three cute ‘Golden Retriever’ dogs. Wait a moment, please! Now, I don’t wanna share everything about Kevin, because I need to write a book on him. Kevin is a good person; he is a very good father; a good husband, and a pet lover. So, here I stop about Kevin, but, one day, I will reveal his biography to surprise you for sure.

Our trip was easy because of my friend Apu’s help, he drove us to see the giant corporations' headquarters, e.g., Google, Microsoft, Apple, and Facebook in Silicon Valley. Moreover, I had the chance to meet a colleague named Tanmoy on the way to Silicon Valley. Again, credit goes to my friend Apu for his patience time. On the other side, brother Delowar gave us a campus tour at Stanford University.

By the way, you learned a bit about my simple living style by seeing my limited clothes, but you will be surprised to know my eating habits for which you should interview my wife.

So, make life simple, cut luxury, don’t think selfishly, eat less, wear less — because if you do so, you will see, the whole universe will think for you, desperate to succeed you. Believe me!

Dividing ASEAN and Conquering the South China Sea


গত দুই দশকে, পশ্চিমারা (মানে আমেরিকানরা) যেখানে মুসলিম নিধনে মেতে ছিল; একের পর এক মুসলিমপ্রধান দেশে যুদ্ধ-বিগ্রহ নিয়ে ব্যতি-ব্যস্ত ছিল, সেখানে চায়না—'চারদিকে বেরিয়ে পড়' (zhou chu qu)—নীতিতে দেশ চালাচ্ছিল ।

আধুনিক চায়নার রুপকার খ্যাত Deng Xiaoping-এর দেয়া পররাষ্ট্রনীতি মেনে চলে, চায়নিজরা নিরবে-নিঃশব্দে এগিয়ে গেছে, প্রায় দু যুগেরও বেশি সময় ধরে । তবে কি এমন যাদু ছিল, Deng-এর সেই পররাষ্ট্রনীতিতে—যে কারণে চায়না আজ এতোটা সফল ! চলুন, দেখে নিই ২৪-শব্দের বিখ্যাত সেই পররাষ্ট্রনীতি ।

"observe calmly; secure our position; cope with affairs calmly; hide our capabilities and bide our time; be good at maintaining a low profile; and never claim leadership"

বাংলা অর্থঃ "শান্তভাবে পর্যবেক্ষণ কর; নিজেদের অবস্থান সুরক্ষিত কর; বিষয়গুলি শান্তভাবে মোকাবেলা কর; নিজেদের ক্ষমতার জানান না দিয়ে, একযোগে লেগে থাকো; দক্ষতার সাথে নিজেদের নিম্ন প্রোফাইল বজায় রেখো; এবং কখনও নেতৃত্বের দাবি করো না ।"

এভাবে দক্ষিন-পূর্ব এশিয়ান দেশগুল নিয়ে গঠিত ASEAN—Association of Southeast Asian Nations-এর সদস্যভুক্ত দেশ যেমন—লাওস, কম্বোডিয়া, মিয়ানমার, এবং ফিলিপাইনে, ধীরে ধীরে চায়না, প্রভাব বিস্তার শুরু করে । এরপর দক্ষিন এশিয়ার আরও কতিপয় ছোট দেশ যেমন—পাকিস্তান, নেপাল, শ্রীলংকা, মালদ্বীপ, বাংলাদেশকেও সেই প্রভাব বলয়ের বাহিরে রাখেনি । অন্যদিকে আফ্রিকান দেশগুলো তো বগলদাবা করে রেখেছে চায়না সরকার, বহু আগে থেকেই । তবে বাদ যায়নি দক্ষিন আমেরিকাও । যেমন—ভেনিজুয়েলা, ইকুয়েডর, উরুগুয়েসহ ব্রাজিল, আর্জেনটিনা, এমনকি মেক্সিকোর মত দেশও রয়েছে সেই লম্বা তালিকায় ।

চায়নার প্রভাব বলয়ে রাখার কৌশলটা খুব সিম্পল । উন্নয়ন কাজে লোন দিয়ে রাজনৈতিকভাবে অস্থির এবং অর্থনৈতিকভাবে দুর্বল দেশগুলিকে কাবু করে রাখা । তবে সমসময় এই লোনের টোপ, সমানভাবে কার্যকর হয়নি । যেমন ফিলিপাইনে অ্যামেরিকার প্রভাব কিন্তু এখনও প্রতীয়মান । ঠিক তেমনি, বাংলাদেশের ক্ষেত্রেও, ইন্ডিয়ার প্রভাব স্পষ্টরূপেই প্রতীয়মান । চায়নার দেয়া লোনের অংক, কোনো দেশের জনসংখ্যার অনুপাত মেনে হয় না, বরং যে দেশে স্বৈরাচারী (অগণতান্ত্রিক) শাসক বিদ্যমান, সেখানেই চায়না বেশি টাকা ঢালে । এতে উভয়পক্ষের লাভ রয়েছে সমান সমান । যেমন, যে অবৈধভাবে ক্ষমতায় থাকতে চায়, তাঁর পেছনে বড় একটা পরাশক্তির সমর্থন থাকা লাগে, নাহলে তো সে সরকারের গদি রক্ষা হবে না । যেমন বাংলাদেশের পাশে ভারত, এক বিশ্বস্ত নাম । ভারতের প্রীতি বাংলাদেশের জনগনের প্রতি নয়, বরং বর্তমান সরকারের প্রতি । ঠিক তেমনি, মিয়ানমারের জান্তা সরকারের প্রধান খুটি চীন, সে একি কারণে । বাংলাদেশের মানুষ যেমন ভারত সরকারকে ঘেন্না করে, একিভাবে মিয়ানমারের মুক্তিকামী জনগণও ঘেন্না করে চীনকে । অথচ পারস্পারিক ক্ষমতা আর অর্থনৈতিক দোলাচলে, চীন, মিয়ানমারের আর ভারত, বাংলাদেশের অবৈধ সরকারকে বৈধতা দিয়ে যাচ্ছে ।

তবে অবস্থাদৃষ্টে, আমার কাছে যেটা মনে হচ্ছে, সেটা ফিলিপাইনের রাষ্ট্রপ্রধান রদ্রিগো দুতুর্তের কথায় বলি, "We cannot stop China. Even America couldn't stop China . . ."

বাংলা অর্থঃ "চীনকে থামানোর সামর্থ আমাদের নেই । এমনকি আমেরিকারও ।"

যাহোক, নিচের বইটি পড়ে, দারুণ কিছু তথ্য পাওয়া গেল । যেখানে চায়না, কীভাবে প্রতিবেশী তথা তামাম দুনিয়ার উন্নয়নশীল দেশগুলোকে, উন্নয়নসহযোগী লোন এবং কিছুক্ষেত্রে অর্থনৈতিক সাহায্য-সহযোগিতার নামে, নিজেদের প্রভাব বলয়েের ভেতরে আটকে ফেলছে—সেটি দারুণভাবে উপস্থাপন করা হয়েছে । যাদের বিস্তারির জানবার আগ্রহ রয়েছে, তাঁরা বইটি পড়ে দেখতে পারেন ।

বইটিতে কিছু মজার চায়নিজ প্রবাদ পেলাম, যেমন—

"The mountains are high, and the emperor is far away."

"পাহাড় তো উঁচু তবে সম্রাটের স্থান তারও বহু ওপরে ।"

"If the water is too clear, you don't catch any fish."

"জল-ই যদি না ঘোলে, তারমানে আপনি কোনও মাছ শিকার করেননি ।"

Tracing China


This book (Tracing China) taught me a lot about the history of South China, especially Hong Kong SAR. I learned about how Hong Kong becomes a cultural kaleidoscope on a world landscape. This book explicitly unfolds the Chinese history, in particular, mostly about post-Mao's reformation of China—how China transforms its cultural and religious clans into a prosperous nation; how small-scale business initiatives give birth to hi-tech cities like Guangzhou and Shengen (main cities in the Pearl River Delta).

This book answers why Hong Kongers not able to find their local mates (to get married). How religious beliefs and traditional rituals have been forgotten for the sake of dead-serious development.

Modern Chinese people are entitled to lavish consumers. Because the new generation Chinese mentality is: "Eat, drink, and be merry"

Moreover, if you read this book, you can learn about some top professional women: those who became the most successful and influential as politicians, lawyers, bureaucrats, etc. in South China. Some of those famous women are #Anson_Chan, #Anna_Wu, #Christine_Loh, and #Margaret_Ng.

Despite having eye-catching financial growth and muscle power, it's a bitter truth that—in modern China, "everything is red, but life is colorless".

বাংলা অনুবাদঃ

এই বইটি (ট্রেসিং চায়না) আমাকে দক্ষিণ চীন, বিশেষত হংকং (বিশেষ স্বায়ত্তশাসিত অঞ্চল)-এর ইতিহাস সম্পর্কে অনেক কিছু শেখাল । বইটি পড়ে আমি জানলাম, কীভাবে হংকং বিশ্বজগতের সামনে একটি বর্ণিল সাংস্কৃতির কেন্দ্রে পরিণত হতে পেরেছে । এই বইটি চীনের ইতিহাসকে স্পষ্টতই খোলাসা করেছে—বিশেষতঃ মাও সেতুং-পরবর্তী চীনের সংস্কার ও উন্নয়ন সম্মন্ধে—চীন কীভাবে তার সাংস্কৃতিক ও ধর্মীয় গোষ্ঠীগুলিকে একটি সমৃদ্ধ জাতিতে রূপান্তরিত করে; কীভাবে ক্ষুদ্রতর ব্যবসায়ের উদ্যোগ, পার্ল রিভার ডেল্টার মূল শহরগুলিকে—যেমন গুয়াংঝো এবং শেঞ্জেনের মত হাই-টেক শহরে রুপান্তর ঘটাল ।

হংকংবাসী কেন বিয়ের জন্য স্থানীয় মেয়েদের খুঁজে পাচ্ছে না? কিভাবে শুধু উন্নয়ন উন্নয়ন করতে গিয়ে নিজেদের ধর্মীয় বিশ্বাস ও ঐতিহ্যকেও ভুলে গেছে এরা—এই বইটি পড়লে, এমন অনেক অজানা প্রশ্নের উত্তর মিলবে ।

আধুনিক চীনা লোকেরা বিলাসী ও ভোগবাদী । কারণ নতুন প্রজন্মের চীনা মানসিকতা হলো "খাও, পান কর এবং আনন্দ কর" ।

তদুপরি, এই বইটি পড়লে, আপনি শীর্ষস্থানীয় কিছু পেশাদার মহিলা সম্পর্কে জানতে পারবেন: যারা চীনা ইতিহাসের নামকরা রাজনীতিবিদ, আইনজীবী, আমলা ইত্যাদি হিসাবে সবচেয়ে সফল এবং প্রভাবশালী হিসেবে পরিচিতি পেয়েছিলেন । এই বিখ্যাত মহিলাদের মধ্যে কয়েকজন হলেন—অ্যানসন চ্যান, আন্না উউ, এবং ক্রিসটাইন লোহ এবং মার্গারেট এঞ্জি ।

চোখ ধাঁধানো আর্থিক সমৃদ্ধি এবং পেশীশক্তি অর্জন সত্ত্বেও, এটি একটি তিক্ত সত্য যে, আধুনিক চীনে, "সবকিছুই লাল, তবে জীবন এখানে বর্ণহীন"। মোদ্দাকথা, এখানে মানুষের জীবনে প্রকৃত সুখ নাই ।

In India: Toilet vs. Technology

After reading my title, you might be preparing yourself imagining that, there will be plenty of ‘laughter out of loud’ to see disrespecting India harshly; then I should warn you here, you might be disheartened at the end by investing some time in reading my content.

Even including me, many of us, show up ourselves as anti-Indian, seeing Indian interference in our beloved cricket, and national political affairs. Sometimes, it is very difficult to tolerate India, when they intend to behave like an emperor in front of an independent nation like Bangladesh. However, I will never be ashamed to admire the achievements of my neighbors, Indians, though that might be going in favor of my counterpart.

In today’s discussion, I will share a few things which are admirable, but I am sure many of you will hardly believe my words, and you will be interested in verifying my statements in google. The reason is very simple; you never imagined such a thing might exist or achieved by our neighbors, especially when it is India. Despite being unsuccessful in achieving good status in sanitation coverage, used to be far behind of Bangladesh and Pakistan, India has developed tremendously in technological advancement that might make someone jealous easily!

As a Bangladeshi, our people always find the cheapest way of disrespecting Indian by saying the most popular, but the oldest story about the people of India, who still enjoy and prefer open defecation. Interestingly, my friend Ashutosh, a Ph.D. student from India, also acknowledge it without any hesitation. However, the current situation of India has been changed a lot by the direct interventions of the government policies, and so many promotional activities executed by the film industries. For instance, the movie entitled ‘Toilet,’ where Akshay Kumar, one of the greatest Bollywood star actors of the time, played the main role, which contributed a lot to change in the conventional way of thinking of those typical Indian people.

Many of us are limited to the story about the Indians to disrespect them only; however, by the last few decades, India became the leader in the digital world, have you noticed it ever? If not then let me help you to focus your vision on some of those untold stories. For your kind information, at the end of each statement, you will find the properly cited reference so that you can verify its authenticity. So, before showing your disagreement at any specific point, please make sure you have double checked yourself with those given references.

  1. ‘Chandrayaan-1’ was launched to the lunar orbit successfully by Indian Space Research Organization (ISRO) on October 22, 2008. The next mission called ‘Chandrayaan-2’ is set to launch in the commencing January 3, 2019 [1] & [2].

  2. ISRO has also sent a mission to Mars called ‘Mangalyaan’ on November 5, 2013; and now it started orbiting the planet Mars since September 24, 2014. This space mission is remarkable to the history of a space mission in many ways: this was the cheapest mission ever and launched successfully at the first attempt. Although Russia, USA, and other European countries have successfully conquered Mars before India’s mission, none of them were able to make a successful mission at their first attempt. Besides, the cost of this space mission to Mars was far lesser than the budget of one of the popular Hollywood Sci-Fi movies called ‘Gravity,’ specially filmed on the mission to Mars [3].

  3. India's Defense Research and Development Organization (DRDO) with cooperation from Russian Federation's NPO Mashinostroyeniya jointly built the world’s fastest cruise missile called ‘Brahmos’ (speed 3400 to 3700 km/h). The specialty of this missile is that it can be used in very lower altitude like 3.0 to 4.0 meters above the ground only so that the powerful rudder system even unable to detect it. The current research group has undertaken a new project of developing the next generation of cruise missile which is called ‘Brahmos-2’, a hypersonic missile with much more speed, and longer range. The team is hoping to finish their task successfully by the year 2020 [4].

  4. Do you know, India is already a nuclear-weapon state (NWS)? Whereas America is crying to stop the nuclear activity in Iran and North Korea these days, the Indian army has tested five nuclear bombs in a series at ‘Pokhran’ range during the ruling of Atal Bihari Vajpayee in 1998. On that day, the ground received a heavy shock due to the released energy of that explosion. Then USGS department of USA reported that phenomenon as a mild earthquake, whose epicenter was near the Pakistan border. It was a top-secret mission led by specialized Indian army so that the secrecy of this mission remains protected for a long time; however, if you are very curious to know about this mission then please watch the film called ‘PARMANU’, a popular Hindi film, where the main role is played by John Abraham [5].

So far, we came to know about the space research and the military strength of our neighbors. Now let me tell you about one of the crucial facts, i.e., Research and Analysis Wing (RAW), Intelligence agency of India, known as one of the best secret agencies, after the most renowned MOSAAD, Intelligence agency of Israel and FBI, Intelligence agency of USA. RAW is a very specialized wing for spying and gathering information from their enemy’s territory. In the international and subcontinental political matters, RAW has a very strong and influential role, which is very hard to deny. They are so powerful that, if you want to know about how they plant their spy agents in their enemy’s land, then you must watch a film called ‘RAAZI,’ a most recent Hindi film released on the spying activity of RAW in the enemy’s territory. One more thing to add here, the result of the national election of Maldives was a successful mission of RAW. After the election, our national newspaper ‘Prothom Alo’ covered a story, and the headline was like this “India wins, but China defeated in the Maldives.” So, now you can imagine the reality! I think the same goes with Bangladeshi national politics; the RAW is actively involved purposefully to gratify their political agenda in our beloved motherland.

Let us know a little bit about the successful Indians in the international ground:

Sundar Pichai, CEO, Google [6], an Indian

Satya Nadella, CEO, Microsoft [7], an Indian

Shantanu Narayen, CEO, Adobe [7] an Indian

Dhivya Suryadevara, a female Indian going to take over the position of CFO at IFC [8]

Apart from this, you hardly find a county or a famous university where there is no footprint of an Indian professor. Eventually, some of them are doing fantastic and holding top positions in their respective field of specializations.

Jaguar Land Rover is no more under the British company as TATA Motors bought it in 2008. And, have a close look and try to think about those fashionable motorbikes that our young riders are very happy to be with, which are all imported from India, will you deny? [9].

In the whole world, every nation has its signatory natures of dealing; for instance, some are stupid and easy going, too much emotional, extremely selfish, arrogant and ruthless, industrious almost like a robot, and few are intelligent and clever. These all kinds of people are from different nations, making the seven colors in the multicultural rainbow. Geographical location, religion, and basic norms learned from family and friends, culture and history, food habits, administration of the ruling government, etc., may have the significant impacts, while building the foundation of ethics and morality in the inner core of our hearts. However, I don’t be ashamed to say that, I feel jealous to see an Indian for his patriotism, and dedication for his/her beloved country. Despite having so many signatory virtues as the Bengali nation, we must learn a lot of things from other nations to enrich ourselves.

In the end, you might be wondering, suddenly, why I am showing so much love and care for the Indians? But, if you consider yourself as a clever guy, then you must know that, knowing the strength and weakness of your enemy is one of the strategies to take a firm stand to defeat them one day. Disrespecting opposition using cheap rumors or poor reasons may shower happiness into your mind for a while, but it won’t help you to strengthen yourself at the end. A great nation never behaves like a miser to admire the strength of the opposition; rather they will wait until the day comes to gain enough muscle power, and learn survival techniques accordingly, to protect themselves from their powerful enemy.

References:

[1.] https://g.co/kgs/nQXA7n

[2.] http://www.planetary.org/…/0813-chandrayaan-2-launch-delaye…

[3.] https://en.wikipedia.org/wiki/Mars_Orbiter_Mission

[4.] https://en.wikipedia.org/wiki/BrahMos\

[5.] https://en.wikipedia.org/wiki/Pokhran-II

[6.] https://en.wikipedia.org/wiki/Sundar_Pichai

[7.] http://www.rediff.com/…/pix-special-meet-the-i…/20150811.htm

[8.] https://qz.com/…/gm-appoints-india-born-dhivya-suryadevara…/

[9.] https://en.wikipedia.org/wiki/Tata_Motors

চিরঞ্জীবি হতে বিজ্ঞানের অভিনব কৌশল!

Date: 18-Oct-2018

—ইংরেজীতে “Man is immortal” কথাটির অর্থ হলো-মানুষ মাত্র অমরনশীল । এক ঝাঁক শিশু-কিশোর প্রাথমিক বিদ্যালয়ের কোনো এক ক্লাসে বসে স্যারের সাথে, বেশ চেঁচিয়ে সমস্বরে ইংরেজিতে ট্রান্সলেশন শিখছে । এরপর স্যার বলছেন, “এইতো সেদিনের কথা, আনমানিক ৩০ বছর আগে, মানে ২০১০-২০১৫ দিকের কথা, যখন আমি তোমাদের মতই শিশু-কিশোর ছিলাম, তখন আমি আমার স্যারের কাছে শিখেছিলাম, ‘Man is mortal’ যার অর্থ মানুষ মাত্র মরনশীল। কি অদ্ভুত ব্যাপার দেখ, বিজ্ঞানের অভিনব কৌশলের কাছে শেষ পর্যন্ত মৃত্যুও হার মেনে গেল!”

কি ভাবছেন, আমি কোনো সাইন্স ফিকশন গল্প লিখতে বসেছি? আরে না, ব্যাপারটা একটু চমকপ্রদ তবে একটু অন্যরকম তো বটেই । পৃথিবীতে প্রতিনিয়ত কত কিছুই না ঘটে চলেছে আমাদের চোখের সামনে । কত কিছুই এক সময় কাল্পনিক ছিল, যা আজ বিজ্ঞানের অবদানে আমাদের সামনে বাস্তবে রূপ নিতে শুরু করেছে । মানুষ একসময় আলিফ লায়লার সেই জাদুকরের হাতে কাঁচের সাদা রঙ্গের যাদুর ‘গোলক’ দেখে অবাক হতো; যেখানে দৈত্য কিংবা পরীরা পৃথিবীর অন্য প্রান্তের অন্য কোনো রাজ্যের খবর লাইভ দেখাতে পারত । অথচ সেই একই কাজ আমরা পৃথিবীর এক প্রান্ত থেকে আরেক প্রান্তে লাইভ দেখছি তাও আবার বেতার প্রযুক্তির মাধ্যমে, আমাদের স্মার্টফোনের বদৌলতে । এমনকি পৃথিবী ছেড়ে মানুষ এখন স্পেইস স্টেশন থেকে মহাবিশ্বের দুরের গ্রহ-নক্ষত্রকে ভবিষ্যৎ আবাসন পাতার চিন্তা ভাবনা করছে । কয়েক দশক আগেও চাঁদের বুড়ির গল্প শুনতে শুনতে দাদীমার কোলে আমরা ঘুমাতে অভ্যস্ত ছিলাম । অথচ আজ মানুষ চন্দ্র-পৃষ্ঠে পৌঁছে গেছে । আবার মঙ্গল গ্রহে রোবট পাঠিয়ে তথ্য সংগ্রহ করছে । তাছাড়া গুগল মামার কথাই যদি চিন্তা করি, আলাদিনের দৈত্যের চেয়ে সে’ইবা কম কিসে । যাই জিজ্ঞেস করছেন, সেকেন্ডের ভগ্নাংশে আপনার সামনে হাজির করছে হাজার হাজার তথ্য।

যাহোক, আজ বলবো মানুষকে চিরজীবী করার এক বাস্তব গল্প । আপনারা জেনে অবাক হবেন যে, আমেরিকান এক প্রাইভেট কোম্পানি, Alcor Life Extension Foundation, মানুষের মৃত্যুর পর তার শরীরকে কৃত্তিমভাবে সংরক্ষণ করে থাকে, যাতে কোনো একদিন সে মানুষটিকে আবার জীবিত করে পৃথিবীতে ফিরিয়ে আনা যায় । শুনতে অদ্ভুত মনে হোলেও ব্যাপারটা সত্য । এবার বিষয়টিকে সহজ করে বুঝিয়ে বলছি—আপনারা ইতিমধ্যে অবলোকন করেছেন যে, মেডিক্যাল সায়েন্সে একজন মানুষ মারা গেলে, সাথে সাথে তার শরীরের সব অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বিকল হয়না । আর সেটি হয় না বলেই মৃত ব্যাক্তির শরীর থেকে প্রয়োজনে অঙ্গ নিয়ে অপর এক ব্যক্তির শরীরে প্রতিস্থাপন করা যায় । এমন বহু সার্জারী সফলভাবে সম্পন্ন হচ্ছে যা আপনার আমার চোখের সামনেই এবং তাতে অনেক মানুষ অন্য আরেকজনের দান করা অঙ্গ নিয়ে বেঁচে আছেন আমাদের মাঝে । ঠিক তেমনিভাবে আপনার মারা যাবার পর শরীরের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ নষ্ট হবার পুর্বে Alcor তা বিশেষ এক প্রক্রিয়ার মাধ্যমে তাদের ল্যাবে সংরক্ষণ করে থাকে । এখানে আরও একটা তথ্য যোগ করা যেতে পারে, যেমন বহুযুগ আগে মানুষ মারা গেলে মিশরীয়রা যেভাবে তাদের মৃত লাশগুলো মমি করে পিরামিডের মধ্যে সংরক্ষণ করত । তবে Alcor পদ্ধতি ঠিক মমি করা নয় বরং পুরো শরীরের কোষগুলোকে সতেজ রাখার একটি বিশেষ প্রক্রিয়া বলা যেতে পারে । এ বিশেষ প্রক্রিয়াটি ক্রায়োপ্রিজারভেষন নামে পরিচিত—Cryopreservation হলো এমন এক পদ্ধতি যেটি বিজ্ঞানের অভিনব কৌশল অবলম্বন পুর্বক মানব শরীরের কোষকে হিমশীতল পরিবেশে বিশেষভাবে সংরক্ষণ করা, যাতে প্রয়োজনে ভবিষ্যতে কখনও উন্নত প্রযুক্তি আবিষ্কৃত হলে, সেই মৃত ব্যাক্তিটিকে পুনরায় জীবত করা যায় সম্পুর্ন অক্ষত অবস্থায় ।

Alcor এই অভিনব ক্রায়োপ্রিজারভেষন প্রযুক্তি মূলত তিনটি ভিত্তির ওপর প্রতিষ্ঠিতঃ

১. কোনো একটি অঙ্গ বিকল হয়ে যাওয়া জীবকে পুনরায় জীবিত করা সম্ভব, যদি তার বেসিক কাঠামো যথাযথভাবে সংরক্ষণ করা সম্ভব হয়।

২. ভিট্রিফিকেশন (not freezing) পদ্ধতিতে বায়োলজিক্যাল কোণো সেলকে খুব ভালোভাবে সুদীর্ঘকাল সংরক্ষণ করা যায় যেটি ইতোমধ্যে বৈজ্ঞানিক পরীক্ষায় প্রমাণিত।

৩. ক্ষতিগ্রস্ত কোষের আণবিক কাঠামোকে পুনরায় নির্মান করা যাবে এমন প্রযুক্তিও বিজ্ঞানের সামনে অনেকটায় দৃশ্যমান ।

তার মানে ধরুন, আপনি আজকে এইমাত্র হৃৎপিণ্ড বিকল হয়ে মারা পড়লেন । তাতে ডাক্তার আপনাকে ক্লিনিক্যাল ডেথ কনফার্ম করলেও আপনার হৃৎপিণ্ড বাদে শরীরের অন্যন্য অঙ্গ প্রত্যঙ্গ তখনো সম্পুর্ন সচল থাকে, তবে তা বিশেষ সময় পর্যন্ত । যেমন আমাদের শরীরের ধমনী, শিরা উপশিরা, রগ, হাড়, চামড়া ইত্যাদি মৃত্যুর পর ৮-১২ ঘণ্টা পর্যন্ত অরক্ষিত থাকলেও আপনার আমার ব্রেইন ক্লিনিক্যাল ডেথের মাত্র ৩ মিনিটের মাথায় সম্পুর্ন বিকল হয়ে পড়ে । কিন্তু কোনোভাবে আপনার শরীরে কৃত্তিভাবে ভেন্টিলেশনের মাধ্যমে অক্সিজেনের প্রবাহ সহ শরীর সচল রাখার আনুষঙ্গিক শর্ত পুরন করা গেলে সেটিও ঠেকানো সম্ভব । আর তাতে আপনার সাথে কারোরোই কোনো যোগাযোগ স্থাপন করা সম্ভব হবেনা ঠিকই, তবে বায়োলজিক্যালি ব্রেইনকে বিকল হওয়া থেকে রক্ষা করা যাবে। যেটি আমরা আজকাল প্রয়শই দেখে থাকি, যেমন উচ্চবিত্তদের অনেকেই শেষ মুহুর্তে মেডিক্যালে কোমায় রাখা হয়, যাতে তার কাছের আত্তীয় স্বজন দূরদেশে থাকলে অন্তত তারা ফিরে না আশা পর্যন্ত একরকম ভেন্টিলেশন দিয়ে শররীটাকে সচল রাখা হয়ে থাকে, যাতে কিছু ঘণ্টা কিংবা কয়েকটা দিনের জন্য রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা যায়। এরপর রোগীর উত্তরাধিকারীরদের অনুমতি সাপেক্ষে শরীরটাকে ভেন্টিলেশন সংযোগ বিচ্ছিন করা হয়ে থাকে; আর এভাবে রোগীর ক্লিনিক্যাল ডেথ নিশ্চিত হয় ।

ক্রায়োপ্রিজারভেষন পদ্ধতির সারকথা হলো- আপনার ক্লিনিক্যাল ডেথ হয়ে যাবার পরেই Alcor বিশেষজ্ঞ একটি দল হাঁসপাতালে হাজির হবে এবং অত্যাধুনিক প্রক্রিয়ায় লাশের শরীর থেকে সমস্ত তরল যেমন রক্ত এবং পানীয় বের করে ফেলে অত্যাধুনিক কেমিক্যাল প্রয়োগের মাধ্যমে শরীরটাকে সচল রাখবে এবং পরবর্তীতে একটি স্টেইলনেস সিলিন্ড্রিক্যাল টিউবের মধ্যে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রীতে আপনার শরীরটিকে সংরক্ষণ করবে । যাতে ভবিষ্যতে চিকিৎসা বিজ্ঞান আরও উন্নত হলে আপনার বিকল হয়ে যাওয়া অঙ্গটি সারিয়ে তুলে পুনরায় আপনাকে জীবিত করে তুলতে পারে । তাদের ভাষ্য অনুযায়ী, ধরুন একটা দুর্ঘটনায় আপনি জ্ঞান হারিয়ে ফেললেন, এখন একজন লোক আপনাকে সেখানে থেকে মেডিক্যলে পৌঁছে দিল এবং উন্নত চিকিৎসা ব্যবস্থায় আপনি সম্পুর্ন সুস্থ হয়ে উঠলেন । দুর্ঘটনার সময় হয়তো আপনি স্পটে মারা যান নাই, কিন্তু অনেক ব্লিডিং হয়েছে কিংবা একটা অঙ্গ হানি হয়েছে । এখন সে অবস্থায় আপনাকে কেউ যদি হাঁসপাতালে না নিত, তাহলে আপনি সত্যি সত্যি মারা পড়তে পারতেন । ঠিক তেমনিভাবে Alcor নামের প্রতিষ্ঠানটির দাবি তারা আপনার শরীরকে ৫০-১০০ বছর পরের ভবিষ্যতের কোন অত্যাধুনিক হাঁসপাতালে পৌঁছে দেবে, এই মর্মে আপনার শরীর সুরক্ষিত রাখার নিশ্চয়তা দিচ্ছে, যাতে আপনি পুনরায় কোনো একদিন সেরে ওঠতে পারেন । আজ আপনাকে সারিয়ে তোলার প্রযুক্তি হয়তো হাতে নেই, তাতে কি ভবিষ্যতে কোনও একদিন যে সেই অত্যাধুনিক প্রযুক্তি উদ্ভাবিত হবে না সেটা কে’ইবা নিশ্চিতভাবে বলতে পারে । আর তাই সে পর্যন্ত Alcor আপনার শরীরের রক্ষণাবেক্ষণ করবে বিশেষ প্রযুক্তির সহায়তায়। তাছাড়া আজকাল চিকিৎসা বিজ্ঞানের অগ্রগতি মানুষকে এমন স্বপ্ন দেখাচ্ছে । যেমন স্টেম সেল টেকনোলজির কথায় ধরুন, একজনের শরীরের একটা অঙ্গ আরেকজনের শরীরে সফলভাবে প্রতিস্থাপন করা গেলেও; শরীর সেটা ঠিকই বুঝতে পারে । আর তাই অন্যের শরীরের অঙ্গকে রোগীর শরীর খুব ভালোভাবে গ্রহণ করতে চায় না । যে কারনে এ ধরনের রোগী পরবর্তীতে খুব বেশিদিন বেঁচে থাকেও না । তাই বিজ্ঞানীরা কাজ করছেন স্টেম সেল টেকনোলজি নিয়ে যেখানে যে ব্যক্তির অঙ্গ প্রতিস্থাপনের প্রয়োজন, সে লোকটির শরীর থেকে স্টেম সেল গ্রহণ করে, তা থেকে কৃত্তিম উপায়ে ল্যাবে সেই অঙ্গ তৈরি করা যাবে । এতে শরীর তা খুব সহজে গ্রহন করবে, কারণ এক্ষেত্রে অন্য শরীরের অঙ্গ প্রতিস্থাপনে যে শাররীরক প্রতিক্রিয়া থাকতো সেটি আর থাকবে না । তাছাড়া থ্রিডি প্রিন্টারের খেত্রেও যেভাবে উত্তরোত্তর আগ্রগতি ঘটছে তাতে অনেক চিকিৎসা বিজ্ঞানী মনে করেন, আর কিছুদিনের মধ্যে আমরা থ্রিডি প্রিন্টারের মাধ্যমে মানুষের অঙ্গ প্রত্যঙ্গ বায়োলজিক্যালি ল্যাবে নির্দিষ্ট্য বৈশিষ্ট্য সম্পন্ন করে তৈরি করতে সক্ষম হবো । আর এইসব সম্ভবনায় মানুষকে মৃত্যুর পর ভবিষ্যতে কোনো একদিন আবারও জীবন লাভ করার মোহে, শরীর কিংবা মস্তিষ্ক সংরক্ষণের জন্য Alcor মত প্রতিষ্ঠানের সদস্যপদ লাভে উৎসাহ যোগাচ্ছে ।

এখন প্রশ্ন হতে পারে, গ্রাহক যে মারা যাবে তাতে তৎক্ষণাৎ Alcor ‘-ইবা জানবে কিভাবে? আসলে প্রতিটি মেম্বার একটি করে স্টিলের নেকলেস অথবা ব্রেসলেট পাবেন । যেটিতে প্রতিটি গ্রাহকের আলাদা আলাদা একটা ডিজিটাল কোড নম্বর থাকবে এবং গ্রাহকের হেলথ রিলেটেড অনেক কিছু রিমোটলি তারা মনিটর করবে । কোনো ইমারজেন্সি পরিস্থিতি হোলে তাদের প্রতিনিধি দল গ্রাহকের কাছে সরেজমিনে হাজির হবে । বিশেষ করে যারা হার্টের পেসেন্ট কিংবা শরীরে ঝুকিপুর্ন অসুখ বহন করছেন তাদের ক্ষেত্রে এটি বেশী উপযোগী । এছাড়া মেডিক্যালে ভর্তি হবার সময় তাদের ‘স্ট্যান্ড বাই’ অ্যাালার্ট রাখার একটা সিস্টেম আছে । এতে তাঁরা আপনার মৃত্যু অবদি সার্বিকভাবে পুরো টীম নিয়ে আপনার পাশে অপেক্ষামান থাকবে । যাতে ক্লিনিক্যাল ডেথ হবার সাথে সাথে তারা শরীর সংরক্ষণ করার কাজ শুরু করে দিতে পারে এবং কোনো অঙ্গ পুরোপুরি বিকল হবার আগেই তারা সেটিকে সংরক্ষণের আওতায় নিতে পারে । এটি আসলে একটি লাইফ ইনস্যুরেন্স পলিসির মতই । Alcor সহযোগে একজন সম্পুর্ন সুস্থ্য মানুষও চাইলে একটা ইনস্যুরেন্স পলিসি খুলতে পারে , যার আওতায় গ্রাহকের চাহিদা মোতাবেক তাঁরা নানবিধ কাভারেজ প্রদান করবে ।

আমার আলোচনার এ পর্যায়ে মাইনাস ১৯৬ ডিগ্রীতে জৈব কোষ মিলিয়ন মিলিয়ন বছর সুরক্ষিত থাকার প্রমান স্বরূপ আরেকটি বিশেষ তথ্য যোগ করা যেতে পারে । যেমন আপনারা জানেন যে, বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধির ফলে পৃথিবীর নর্থ পোলে মানে এনটার্কটীকাতে যে বরফ রয়েছে তা গলে যাচ্ছে, তাতে সমুদ্র পৃষ্ঠের উচ্চতা ক্রমেই বৃদ্ধি পাচ্ছে । কিন্তু এর সাথে সাথে বায়োলজিষ্টরা আরও একটি বিষয়ে মহাআতঙ্কে আছে, আর সেটি হলো বরফ গলা পানির সাথে প্রাগৌতিহাসিক যুগের (ডাইনোসর বিলুপ্ত হবার আগে) ব্যাকটেরিয়া কিংবা ভাইরাস যারা এখনও উপযুক্ত পরিবেশ পেলে প্রান ফিরে পেতে সক্ষম । আর তারা নতুন করে যদি আমাদের পরিবেশে বংশ বিস্তার করতে শুরু করে, তবে মানব সভ্যতা ভয়াবহ হুমকির সম্মুখীন হতে পারে । কারণ এমন হাজার হাজার, কোটি কোটি অণুজীব সম্বন্ধে মানুষ এখনও অজানা এবং তাদের বিরুদ্ধে মানুষের বেঁচে থাকার জন্য যেমন প্রতিষেধক (এন্টিবায়োটিক) দরকার সেটাও আমাদের হাতে নেই । তাছাড়া আপনি আরও জেনে অবাক হবেন যে, মানুষের স্পার্ম (বীর্য) সংরক্ষণের আরও একটি অদ্ভুত প্রজেক্ট চলমান, যেখানে মানুষের স্পার্ম নিয়ে এন্টার্কটীকার হিম শীতল পরিবেশে, বরফে ঢাকা পাহাড়ের অনেক গভীরে সুরক্ষিত রাখার পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হয়েছে, যাতে মানুষ যদি কোনোদিন কোনো মহাবিপর্যয়ের কারনে ডাইনোসরের মত বিলুপ্ত হয়; তাতে মিলিয়ন মিলিয়ন বছর পরে হোলেও ভবিষ্যতের কোনো এক ইনটেলিজেন্ট জেনারেশন পৃথিবীতে মানুষের পুনরুত্থান ঘটাতে পারবে।

এবার আসি, Alcor এই কর্মসুচী কিভাবে পরিচালিত হয় । এখানে দু’ভাবে শরীর সংরক্ষণ করা যায় । শরীরের পুরো অংশ (হোল বডি ক্রায়োপ্রিজারভেষন) অথবা শুধু মাথা (নিউরোপ্রিজারভেষন) । কারণ তাদের ধারনা- পরবর্তীতে সম্পুর্ন কৃত্তিমভাবে শরীরের অন্য অংশ নির্মান করার টেকনোলজি চলে আসলে, তাতে শুধু মাথা বসিয়ে দিলেই সেই ব্যাক্তিকে ফিরে পাওয়া যাবে । সমগ্র প্রক্রিয়াটি বেশ ব্যায়বহুল, যেমন পুরো শরীর ক্রায়োপ্রিজারভেষন পদ্ধতিতে সংরক্ষণে জনপ্রতি প্রয়োজন হবে ১ কোটি ৮৫ লাখ টাকার মত (USD$2,20,000)। আর শুধু মাথা মানে ব্রেইন সংরক্ষণে ৮৫ লাখ টাকার মত (USD$1,00,000)। এত ব্যয়বহুল হওয়া সত্যেও সর্বশেষ তথ্য অনুযায়ী ইতোমধ্যে ১২১৪ জন ক্লায়েন্ট যারা Alcor সাথে তাদের মারা যাবার পরে শরীর সংরক্ষণের জন্য চুক্তিবদ্ধ হয়েছেন ।

বিষয়টা ভালোভাবে বুঝতে নিচের দেয়া ভিডিও লিঙ্কে দেখে নিতে পারেন এবং Alcor ওয়েব সাইটে ভিজিট করে বিস্তারিত আরও অনেক অজানা তথ্য জেনে নিতে পারেন ।

https://www.youtube.com/watch?v=tIayH28s8Vg

ভারতেঃ শৌচালয় বনাম প্রযুক্তি

আমার লেখার টাইটেল পড়ে, আপাত দৃষ্টিতে প্রতিবেশী রাষ্ট্রকে নিয়ে কটূক্তি কিংবা হাঁসির অনেক উপকরণ মিলবে ভাবলে, আপনি হয়তো আমার এ লেখাটি পড়ে বেশ হতাশ হতে পারেন ।

আসলে আমি নিজেও ব্যক্তি হিসেবে, ক্রিকেট প্রসঙ্গে কিংবা আমাদের দেশীয় রাজনৈতিক প্রসঙ্গে, ভারতের নবাবগিরির ঘোর বিরোধী । তবে কিছু সত্য স্বীকার করে নিতে দ্বিধা নেই, এমনকি সেটা যদি ঘোর শত্রুর পক্ষে যায় তবুও ।

আজকের আলোচনায় আপনাকে এমন কিছু তথ্য জানাবো, যার প্রতিটা জেনে আপনাকে গুগল করতে হতে পারে । কারণ, আপনি প্রথমে ব্যাপারটা হয়তো মানতেই পারবেন না যে, প্রতিবেশী দেশ ভারত তাদের শৌচালয় প্রসঙ্গে এত পিছিয়ে থেকেও, প্রযুক্তিতে এত অভাবনীয় উন্নতি করেছে কিভাবে; যেটি ঈর্ষনীয় তো বটেই!

ভারতীয়দের নিয়ে কটূক্তি করার সবচেয়ে সস্তা কথা হলো, ভারতীয়দের উল্লেখযোগ্য একটি সংখ্যা আজও খোলা যায়গায় পায়খানা করে । মজার ব্যাপার হলো, এ বিষয়ে আমার এক ভারতীয় সহপাঠী আশুতোষ ও একমত, বিনা অভিযোগী, এক বাক্যে স্বীকার করে নিল ব্যাপারটা । এমনকি বাংলাদেশ, পাকিস্তানের চেয়েও এ খাতে তারা বেশ পিছিয়ে । তবে বর্তমানে রাষ্ট্র যন্ত্রের প্রচার-প্রচরনা, এমনকি টয়লেট নিয়ে সম্প্রতি অক্ষয় খানের 'টয়লেট' নামক সিনেমাটি বেশ সুনাম কুড়িয়েছে; সেইসাথে সমাজ সচেতনা বাড়তেও বেশ ভালো অবদান রাখছে ।

প্রতিবেশী দেশ নিয়ে আমাদের বেশিরভাগ লোকেদের জ্ঞান ওই পর্যন্তই, মানে যতটুকু জানলে তাদের ছোট করে রাখা যায় আর কি । কিন্তু গত কয়েক দশকে প্রযুক্তিগত উন্নয়নে ভারতীয়রা কোথায় পৌছে গেছে, সেটা জানেন তো? তবে আমি আপনাকে বিস্তারিত কিছু তথ্য দিয়ে সাহায্য করছি (রেফেরেন্স সহ); দয়া করে আমার সাথে দ্বিমত পোষণ করার আগে, আমার কথাগুলো মিলিয়ে নেবেন ।

১. Indian Space Research Organisation (ISRO), ‘চন্দ্রায়ন-১’ নামে, চাঁদে প্রথম সফলভাবে মিশন পাঠায় ২২শে অক্টোবর ২০০৮ সালে । ‘চন্দ্রায়ন-২’ মিশন জানুয়ারি ৩, ২০১৯-শে উৎক্ষেপণের অপেক্ষায় রয়েছে । References: [1]&[2]

২. মঙ্গল গ্রহের কক্ষপথে ISRO এর পাঠানো প্রথম কৃত্তিম উপগ্রহ 'মঙ্গলায়ন' । উৎক্ষেপিত হয় ৫-ই নভেম্বর ২০১৩ সালে যা ২৪ শে সেপ্টেম্বর ২০১৪ সাল থেকে মঙ্গলের কক্ষপথ প্রদক্ষিণ করছে । এই স্পেইস মিশনটি বিশেষভাবে উল্লেখযোগ্য তার কারণ, এটি এযাবতকালীন সবচেয়ে সস্তা বাজেটের এবং প্রথম বারের চেষ্টায় নভোমণ্ডলে পরিচালিত, সফল একটি অভিযান ছিল । অর্থাৎ, আমেরিকা এবং রাশিয়া সহ ইউরোপীয়রা, ভারতীয়দের আগে মঙ্গলে স্পেইস মিশন পাঠালেও এদের কেউই প্রথমবারের চেষ্টায় সফল হয় নাই । এছাড়া খরচের দিক থেকে ভারতীয় মিশনের চেয়ে আমেরিকান এবং রাশিয়ান মিশনগুলো ছিল বহুগুণে ব্যয়বহুল । এমনকি মঙ্গল অভিযানের উপর নির্মিত হলিউডের জনপ্রিয় সিনেমা 'গ্রাভিটি' নির্মানে যে ব্যয় হয়, তার চেয়ে ভারতীয় মিশনের খরচা ছিল অনেকাংশে কম । Reference: [3]

৩. ভারতের India's Defence Research and Development Organisation (DRDO) এবং রশিয়ার Russian Federation's NPO Mashinostroyeniya-এর যৌথ উদ্যোগে সুপারসনিক ক্রুইস মিসাইল 'ব্রাহ্মস' তৈরি হয়, যেটি এখন পর্যন্ত পৃথিবীতে সবচেয়ে দ্রুতগামী ক্রুইস মিসাইল হিসেবে রেকর্ড ধারণ করে আছে (গতিবেগ ৩৪০০-৩৭০০ কি.মি./ঘন্টা)। আর এই মিশাইলের বিশেষত্ব হলো, ভূপৃষ্ঠের খুব অল্প উপর দিয়ে চলতে পারে (মাত্র ৩ থেকে ৪ মিটার), যাকে শক্তিশালী কোনো রাডারও সনাক্ত করতে পারবে না । বর্তমানে গবেষকদল গবেষণাগারে হাইপারসনিক ভার্সন, মানে আর বেশি উচ্চগতি সম্পন্ন মিসাইল 'ব্রাহ্মস-২' নিয়ে কাজ করছে । তারা আশাবাদী যে, ২০২০ সাল নাগাদ তারা এই কার্যক্রম সফলভাবে শেষ করতে পারবে । Reference: [4]

৪. আপনি কি জানেন, ভারত পারমানবিক অস্ত্র সম্পন্ন একটি দেশ । যেখানে সারা বিশ্ব আমেরিকার সাথে ইরান এবং নর্থ কোরিয়ায় পারমানবিক অস্ত্র নিয়ে এত গুঞ্জন অবলোকন করছে, সেখানে ১৯৯৮ সালে, ভারত, অনেক গোপনীয়ভাবে ভারতীয় সেনাবাহিনীর 'পোখরা রেইঞ্জে', পর পর পাঁচটি সিরিজ পারমানবিক বোমার সফলভাবে পরীক্ষা সম্পন্ন করে । ওইদিনে বিশাল এলাকা জুড়ে ,পারমানবিক বোমার বিস্ফোরণে, এতটায় ভূকম্পনের সৃষ্টি হয়েছিল যে, আমেরিকান United States Geological Survey (USGS) ডিপার্টমেন্ট, উক্ত ঘটনাকে পাকিস্তান সীমান্তে ছোট মাত্রার ভূমিকম্প বলে প্রচার করে । অটল বিহারী বাজপেয়ীর শাসনামলে সম্পন্ন, সেই বিশেষ পারমানবিক বোমার গোপন পরীক্ষা নিয়ে আরও বেশি জানতে আগ্রহী হোলে, এই মিশনের উপর নির্মিত, জন আব্রাহাম আভিনীত চলচিত্র 'পরমাণু' দেখে ফেলতে পারেন । Reference: [5]

মহাকাশ প্রযুক্তি এবং মিলিটারি সক্ষমতা নিয়ে তো জানলাম, এবার আসি আরেকটা মোক্ষম বিষয়ে, তা হলো- Research and Analysis Wing (RAW), Intelligence agency of India। যেটি সারা দুনিয়া ব্যাপী চষে বেড়ানো নম্বর ওয়ানঃ MOSAAD, Intelligence agency of Israil and FBI, Intelligence agency of USA, ওদের পরেই শক্তিশালী স্পাই (গুপ্তচর) ভিত্তিক অর্গানাইজেশন হিসেবে আন্তর্জাতিক অঙ্গনে সুপরিচিত । উপমহাদেশের এবং আন্তর্জাতিক রাজনৈতিক অঙ্গনে RAW এর ভূমিকা অস্বীকার করার উপায় নেই । তারা এতটায় শক্তিশালী যে, তাঁরা কিভাবে কাজ করে সেটা বুঝতে হোলে, আপনাকে 'RAAZI' নামক সম্প্রতি একটি হিন্দি সিনেমা রিলিজ হয়েছে, তা দেখে নিতে হবে । RAW নিয়ে আর কি বলবো, গত কয়েকটা দিন আগে, মালদ্বীপের জাতীয় নির্বাচনে জয়ী দলের নামের বদলে প্রথম আলোতে হেড লাইন দেখলাম, সেখানে লেখা 'মালদ্বীপে ভারতের কাছে চীনের পরাজয়' । অর্থাৎ, তাদের জাতীয় নির্বাচনে প্রত্যক্ষভাবে RAW তাদের পছন্দের দলকে জয়ী করতে কাজ করেছে এবং তারা সফলভাবে সেটা করতে পেরেছে বলে বিভিন্ন অন্তর্জাতিক নিউজ মিডিয়ায় খবর এসেছে । একইভাবে আমাদের বাংলাদেশের রাজনীতিতে, RAW এর সম্পৃক্ততা অস্বীকার করার উপায় নেই ।

এত গেল, হাইটেক প্রযুক্তি এবং RAW নিয়ে কথা, এবার আসি সারাবিশ্বে বড় বড় প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠানে ভারতীয়দের সফলতার গল্পে-

* গুগলের বর্তমান CEO, সুন্দর পিচাই [6], একজন ভারতীয়।

* সত্য নাদেলা, CEO, Microsoft [7], একজন ভারতীয় ।

* সন্তানু নারায়ণ, CEO, Adobe [7] একজন ভারতীয় ।

* সম্প্রতি ডিভা সুরিয়াদেভারা (Dhivya Suryadevara) নামের এক ভারতীয় নারী, প্রথম বারের মত আন্তর্জাতিক মুদ্রা তহবিল (IFC) এর প্রধান অর্থনৈতিক কর্মকর্তা (CFO) হিসেবে যোগ দিতে যাচ্ছেন [8]।

* তাছাড়া সারা দুনিয়ায় বড় বড় বিশ্ববিদ্যালয়ে, বহু ভারতীয় প্রফেসরকে দেখবেন, যারা অনেকেই তাদের নিজ নিজ ফিল্ডে খুবই নামকরা ।

* Jaguar Land Rover গাড়ীর ব্র্যান্ডের নাম শুনে অবাক হচ্ছেন? এটি ২০০৮ সালের জুন মাসের পর ব্রিটিশ কোম্পানির কাছ থেকে সম্পুর্ন স্বত্ব কিনে নিয়েছে ভারতের টাটা মটরস । আর মোটর বাইকের কথা আর কি বলবো, আমাদের দেশে ছেলেদের আজকাল ফ্যাশনের তালিকায় যে বাইকগুলো দেখেন, তার সিংহভাগ আসে ভারত থেকে, এতে অস্বীকার করার উপায় নেই [9]।

পৃথিবীতে প্রত্যেক জাতিই কিছু না কিছু স্বতন্ত্র গুণাবলীর কারণে আলাদাভাবে পরিচিত । যেমন কেউবা সহজ-সরল, অতিমাত্রায় আবেগী, কেউ কেউ ভীষণ স্বার্থপর, কেউবা হিংসুটে ও নিষ্ঠুর, কেউবা মানুষরূপী মেশিনের মত পরিশ্রমী, আবার কেউবা অত্যন্ত চালাক, মেধাবী এবং সৃষ্টিশীল । ভালো-মন্দ মিলেমিশেই সাত রঙ্গা রং ধনুর ন্যায় আমরা একেক মানসিকতার মানুষ হিসেবে ধীরে ধীরে সমাজে বেড়ে উঠি । যেখানে ভৌগলিক পরিবেশ, ধর্মীয় অনুশাসন এবং পারিবারিক শিক্ষা কিংবা হাজার বছরের ইতিহাস, ঐতিহ্য, এমনকি আমাদের খাদ্যাভ্যাস কিংবা রাষ্ট্রীয় শাসন ব্যবস্থার দ্বারাও আমাদের বিবেক, মনুষত্যবোধের গোড়া পত্তন হয় । তবে বলতে দ্বিধা নেই, আমি ঈর্ষা করি একজন ভারতীয় সহপাঠীকে, তাঁর অসীম দেশপ্রেম এবং নিজ দেশের প্রতি ডেডিকেশন দেখে । আমার মনে হয়, সমৃদ্ধির জন্য অন্য দেশের নাগরিকদের কাছেও আমাদের কিছু না কিছু শেখার আছে ।

লেখাটি পড়ে ভাবছেন, দুনিয়ায় এতসব বিষয় থাকতে, আমার হঠাৎ এত ভারত প্রীতি কেন? আসলে আপনি যদি চালাক লোক বলে নিজেকে দাবি করেন, তবে শত্রুর শক্তি এবং দুর্বলতা উভয় বিষয়ে বেশি বেশি জানার চেষ্টা করুন । মিথ্যে এবং সস্তা আবেগী কটূক্তি দিয়ে সাময়িক হৃদয়ের জালা মেটানো যায়, কিন্তু শত্রু পক্ষকে প্রতিহত করা যায় না । আর প্রকৃত মানুষ তার প্রতিপক্ষের গুণাবলীকে অস্বীকার করার মত স্পর্ধা দেখায় না, বরং সম্মান প্রদর্শন করে এবং মনে মনে পণ করে যাতে প্রতিপক্ষের সামনে নিজেকে অধিক গুণাবলী নিয়ে, গর্বের সাথে, শক্ত ভিত নিয়ে একদিন দাঁড়াতে পারে।

উপরের আলোচনায় উল্লেখিত তথ্যসূত্রের তালিকা নীচেঃ

[1.] https://g.co/kgs/nQXA7n

[2.] http://www.planetary.org/…/0813-chandrayaan-2-launch-delaye…

[3.] https://en.wikipedia.org/wiki/Mars_Orbiter_Mission

[4.] https://en.wikipedia.org/wiki/BrahMos\

[5.] https://en.wikipedia.org/wiki/Pokhran-II

[6.] https://en.wikipedia.org/wiki/Sundar_Pichai

[7.] http://www.rediff.com/…/pix-special-meet-the-i…/20150811.htm

[8.] https://qz.com/…/gm-appoints-india-born-dhivya-suryadevara…/

[9.] https://en.wikipedia.org/wiki/Tata_Motors

২০৮০ সালের মহামারীর নেপথ্যে (একটি সম্পুর্ন কল্পকাহিনীঃ পর্ব-১)

আবু হাশনাত বাদশা (তারিখ ২৪ শে মার্চ ২০১৫ )

ফেব্রুয়ারী মাসের শেষ, মার্চের প্রথম সপ্তাহ যখন সারাদেশে মহামারীর মত মানুষ মারা যাচ্ছে । অতি সামান্য অসুখে এমনকি কাটা ছেঁড়ার মত রোগ-বালাই মানুষের মরন ব্যধিতে রুপ নিচ্ছে । শুধু ঢাকাতেই বিভিন্ন হাসপাতালে একদিনে ২৫০০এর উপরে লোক মারা গেছে । সারা বিশ্বের সমস্ত খ্যাতিমান গমাধ্যমের শিরোনাম হিসেবে খবর ছাপা হয়েছে । চারিদিকে আতংক বিরাজ করছে । সারা বিশ্বের সায়েন্টিফিক কমিউনিটি-এর ভয়াবহতা কিছুটা আগের থেকে আঁচ করতে পারলেও তাদের পক্ষে এত দ্রুত তেমন কিছুই করা সম্ভবপর ছিলনা । আসলে, অনুন্নত দেশে প্রচলীত রোগপ্রতিরোধক অ্যান্টিবায়োটিকের ব্যবহার খুবই অনিয়ন্ত্রিত । আর এসব অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা প্রয়োগের ফলে বেশিরভাগ রোগ জীবানু যেমন ব্যাক্টেরিয়া, ভাইরাস প্রচলীত অ্যান্টিবায়োটিকের বিপরীতে প্রতিরোধী শক্তি অর্জন করে ফেলেছে । আর তারই ফলশ্রুতিতে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতির মোকাবিলা করতে হচ্ছে আজ গোটা জাতিকে ।

গত রাতে পরীক্ষাগারে জটিল একটা এক্সপেরিমেন্ট নিয়ে কাজ করতে করতে মিস্টার বোস টেবিলের উপর মাথা রেখেই ঘুমিয়ে পড়েছেন । হাতের কাছে মোবাইল ফোন কিনবা এলার্ম ঘড়িটা না থাকায় কোনরুপ অসঙ্গতি ছাড়ায় দিব্বি ঘুমিয়ে যাচ্ছেন । দিনটাও ছিল রোববার তাই সভাবতই সেদিন সকালে অফিস করতে কোনো কর্মচারীও আসেনি । তখন বেলা ১০ টা, হঠাৎ একটা বিকট শব্দে ঘুম ভেঙে মিঃ বোস চোখ মেলার চেস্টা করলেন । আসলে টেবিলের উপর রাখা পানির গ্লাসটা ঘুমের ঘোরে বাম হাতের ধাক্কা খেয়ে পড়ে মুহুর্তেই মেঝের উপর টুকরো টুকরো হয়ে গেলো । কিন্তু, মিস্টার বোস প্রথম ৩০ সেকেন্ডে কিছুই ঠাউরে উঠতে পারলেন না । হঠাৎ ঘুম থেকে উঠে হতভম্ব ভাবে বোঝার চেস্টায় করে যাচ্ছিলেন- তিনি এখন কোথায়? কিনবা কি ঘটতে যাচ্ছে এসব আর কি । ভাঙ্গা কাঁচের টুকরোগুলো থেকে এমনভাবে আলোক রশ্মী ঝলমল করে তার চোখের উপর ধেয়ে আসছিলো যে, তা ছোটোবেলার কেচ্ছা কাহীনির সেই রুপকথার রাজ্যে মনিমুক্তা আর হীরা-জহরতের কথায় মনে করে দিচ্ছিল । যাহোউক, ক্লান্ত শরীরে ল্যাব থেকে সোজা বাসায় । কফির মগে চুমুক দিতে দিতে ড্রয়িং রুমে ভার্চুয়াল ওয়ালে চোখের ইশারায় কমান্ড দিতেই বিশাল টিভির স্ক্রিনে একের পর এক নিউজ চোখে পড়লো । ঘটনার ভয়াবহতা আঁচ করতে তার এতটুকুও দেরি হোলনা । হবেই বা কেন কারন, প্রফেসর কার্লস লোপেজ এর অধীনে তার বর্তমান গবেষনার বিষয়বস্তু এবং তার উপরে লিখিত একটি প্রবন্ধ 'দ্য ন্যাচার' নামক বিশ্বের ক্ষ্যতিমান বৈজ্ঞানিক জার্নাল-এ প্রকাশ করে সারা পৃথিবীতে আলোড়োন ফেলে দিয়েছেন । যেখানে সে মহামারীর ভয়াবহতা সম্পর্কে একটা ধারনা দেওয়া হয়েছে । যেমন উন্নয়নশীল দেশগুলোর প্রধান সমস্যা হলো ঔষধ এর যথেচ্ছা ব্যবহার । যেমন আমাদের সামান্য সর্দি কাশি কিনবা জর হলেই নিজেই বড় ডক্টর বনে যায় । আর ডিস্পেন্সারী থেকে ইচ্ছে মত ঔষধ সেবন করে থাকি । এক্ষেত্রে সরকারী নিতিমালারও যথেষ্ট ঘাটতি রয়েছে সেই সাথে মানুষের মধ্যে সচেতনাতার অভাবও অন্যতম একটা কারন । তাছাড়া গ্রামে হাতুড়ে চিকিতসকদের যোগ্যতা সম্পর্কে আমরা কম বেশী সবাই ওয়াকিবহাল । আর সেই সব কারনে ঔষধের যথেচ্ছা প্রয়োগে মানব দেহে বাসা বাঁধা রোগ-জীবানু প্রতিরোধী হয়ে উঠছে । তবে কি এই সময় মেডিসিনের ডেভেলপমেন্ট থমকে ছিলো? ব্যাপারটি আসলে তা নয় কারন, যেসব প্রতিষ্ঠান নিত্য নতুন ঔষধ প্রস্তুত ও গবেষনা করে থাকে সে সকল উন্নত দেশে সরকারী নিয়োমনীতি খুব কঠিন এবং চিকিৎসা ব্যাবস্থাও উন্নতর । সেইসাথে তারা আত্তসচেতন বলে সেসব দেশে অ্যান্টিবায়োটিকের যথেচ্ছা ব্যবহার একেবারেই অসম্ভব । বিশেষ করে প্রেসক্রিপ্সন ছাড়া সাধারন ঔষধ ক্রয় করাও কঠিন । তাতে করে তাদের দেশে প্রেক্ষাপট সম্পুর্ন ভিন্ন । একারনে, সেখানে প্রচলিত ঔষধ এখনো সমান ভাবে কার্যকরী । তাছাড়া নতুন অ্যান্টিবায়োটিক ডেভেলপমেন্টের দিকে তাদের নজর তুলনামুলক ভাবে কম ছিল। বরং, গত দুই দশকে ইউরোপ, আমেরিকার বড় বড় গবেষনা প্রতিষ্ঠানগুলো এইচআইভি, এবোলা আর হার্ট সহ নানান গুরুতর রোগ বালাই এর প্রতিশেধক আর ক্লোন উদ্ভাবনেই বেশি সময় এবং অর্থ ব্যায় করেছে । তাছাড়া সেসব গবেষনার তাদের সফলতাও কম নয় যেমন, ২০৪৫ সালের ক্যান্সার এবং ২০৬২ তে সর্বপ্রথম এইচআইভি এর প্রতিষেধক আবিস্কার অন্যতম । সেই সাথে মানুষের শরীরে নতুন কিছু মরন ব্যাধীও জন্ম নিতে শুরু করেছে যেমনঃ 'অসটিগমাটিজম-৪' । এটি নতুন এক ভাইরাস জনিত চোখের রোগ । যার বেসির ভাগই অতিমাত্রায় ডিজিটাল প্রযুক্তি নির্ভর ডিভাইস ব্যবহারের ফলে মানুষের মধ্যে ছড়িয়ে পড়ছে । কারন ডিজিটাল যুগে জন্মের পর থেকে একটা মানুষ যে পরিমান ডিজিটাল ডিসপ্লে যেমন স্মার্টফোন, কম্পিউটার এর উপর চোখ রাখে তাতে করে চোখের পাতার সাভাবিক ব্লিঙ্কিং ফ্রিকুয়েন্সি ব্যহত হয় । যার জন্য প্রাথমিক পর্যায়ে চোখের পানি পড়তে শুরু করে কিন্তু, এরপর চোখের পীপ হোল থেকে রক্ত খরন এবং পরিশেষে চোখের পাতা পারালাইজড হয়ে পড়ে । এতে করে রোগী ক্লান্ত থাকলেও রাতের বেলা ঘুমের সময় চোখের পাতা বুজতে পারেনা । যে কারনে ঘুমহীন শরীরে যে ক্লান্তি থাকে তা কোন অবস্থাতেই লাঘব হয়না । আর যার ভহাবহ পরিনীতি অকাল মৃত্যু । গত দশকে এর পরিমান যে হারে বেড়ে চলেছে সেটাও খুব ভয়াবহ । এক প্রতিবেদনে জানা যায় যে বর্তমানে ১২ বিলিয়ন মানুষের মধ্যে প্রাই ৩ বিলিয়ন মানুষ তার জীবনের কোন না কোন স্টেইজে এ রোগের দারা আক্রান্ত হবার সম্ভনা আছে । প্রতিবছর এমন রোগে আক্রান্ত হয়ে মিলিয়ন লোক মারা যাচ্ছে আর প্রতিবছর তা জ্যামেতিক হারে বেড়েই চলেছে ।

চলবে.………

পাকারামের ‘তপু’ আর আমার শৈশব

এখন ভোর ৪ টা বেজে ৪৫ মিনিট । সকাল হোলেই আমরা বাংলাদেশী ছাত্ররা মিলে হংকং-এর গ্রাসল্যান্ড আইল্যান্ডে দিনব্যাপী আনন্দ ভ্রমনে রওনা হবো । কারন, চাইনিজ নতুন বর্ষ উৎযাপন উপলক্ষে আমার ভার্সিটিতে ৪-দিনের সরকারী ছুটি চলছে । অন্যদিকে এই ছুটিতে ভাবলাম আমার এক ছাত্র Tushar K Paul-এর দেয়া পুরস্কারপ্রাপ্ত সিনেমাগুলোর তালিকাটাও খালি করে ফেলবো । তবে একটা সিনেমার ঘটনা আমার শৈশবের সাথে এতটা কাকতালীয়ভাবে মিলে যেতে পারে তা স্বপ্নেও ভাবতে পারিনি । শুধু আমার শৈশবের সাথে মিলে গেছে বলেই নয় বরং, এত সাবলীলভাবে একটা সিনেমা মানুষের জীবনের বাস্তবতাকে ফুটিয়ে তুলতে পারে সেটা হয়তো এই সিনেমাটা দেখার পুর্বে আমার ভাবনাতেও আসেনি । যদি আপনার হাতে সময় থাকে তবে আসধারন এই ছবিটা দেখতে অবশ্যই ভুলবেননা । আমি একরকম গ্যারান্টি দিয়ে বলতে পারি সিনেমাটা দেখার পরে আপনার দৃষ্টিভঙ্গিতে পরিবরর্তন আসতে বাধ্য । সিনেমাটা দেখার পর এতটায় আবেগ প্রবন হয়ে পড়লাম যে, এ মুহুর্তে ঘুমোতে যাবার পরিবর্তে আমার শৈশবের কিছু ঘটনা শেয়ার করার লোভ সামলাতে পারছিনা কিছুতেই । তাই কি আর করার ঘুম ছেড়ে লিখতে বসে গেলাম ।

আমার ছেলেবেলায় তপুর মতই খুব ছবি আঁকার নেশা পেয়ে বসেছিল । কিন্তু দুঃখের বিষয় আমাকে রং তুলি কিংবা আর্ট পেপার কিনে দেবার মত পরিবারের সামর্থ ছিলনা । তবে এতে আমার আঁকাআঁকির সে নেশা কখনই থেমে ছিলনা । মায়ের চোখের আড়ালে রান্নাঘর থেকে হলুদ গুড়া দিয়ে হলুদ রং, মাটির হাঁড়িতে লেগে থাকা কালি চামুচ দিয়ে ঘসে ঘসে কালো কালির গুড়ার সাথে সয়াবিন তেল মিশিয়ে কালো রং আর বাজার থেকে আট আনার লাল আর সবুজ দু ধরনের সস্তা রংয়ের গুড়ো, যেগুলো এক সময় বিয়ে বাড়ীতে একে অপরকে রং মাখাতে ব্যবহৃত হত । রং তো হলো এবার পেইন্টিং ব্রাশ! সেটাও ব্যাবস্থা হয়েছিল খুবি সহজ উপায়ে যেমন খেজুর কিংবা আটাশরি নামক গাছের ডালের মাথা থেঁতলে দিয়ে মেশুয়াকের মতো নরম হলে সেগুলাকে ব্যাবহার করতাম তুলি হিসেবে । আর আর্ট পেপারের বদলে সিমেন্টের বস্তার ভেতরে থাকা সে খাকি রঙ্গের মোটা কাগজ যেটা কিনা সে সময়ে নতুন বইয়ের মলাট হিসেবে ব্যবহৃত হতো । কপালগুনে নানা বাড়ির বিল্ডিংয়ের কাজ চলায় পরিত্যাক্ত অনেক বস্তা ফ্রিতে পেয়ে গিয়েছিলাম হাতের কাছে । তাছাড়া, পুরানো ক্যালেন্ডারের পেছনের সাদা অংশকেও অনেকবার আমি আমার আর্টের ক্যানভাস হিসেবে ব্যবহার করেছি । এরপর বাকি থাকে সাদা রং তবে সেটাও খুঁজে নিয়েছিলাম প্রতিবেশী দাদা-দাদিদের পান খাওয়ার চুনের খুঁটি থেকে । স্কুল থেকে ফিরেই এভাবে প্রাকৃতিকভাবে জোগাড় করা জিনিসপত্র দিয়ে আমি কোনরকম প্রশিক্ষণ ছাড়ায় বেশীরভাগ সময় মশগুল থাকতাম আঁকাআঁকি নিয়ে ।

আমার আঁকাঁআঁকি নিয়ে মা-বাবার মাঝে তেমন বাড়তি কোন উৎসাহ না থাকলেও প্রতিবেশী আর বন্ধু-বান্ধবদের উৎসাহ ছিল ঠিকই । যেমন ক্লাসমেটদের কারো কারো লাভ লেটারের কভার ডিজাইন করা কিংবা নতুন বইয়ের মলাটের উপর বড় বড় অক্ষর কেটে আর্ট করে নাম লিখা । এছাড়াও গ্রামের বাজারে বিভিন্ন দোকানের নাম আর্ট করে লিখা কিংবা প্রতিবেশী ভাবি/চাচি/ফুফিদের বালিশের কভার কিংবা কাপড়ের ওয়ালমেট ছিল আমার নিত্যদিনের ছবি আকার ক্যানভাস । তার চেয়েও বড় ক্যানভাস ছিল আমার গ্রামের সে দাদার আমলের পুরানো মাটির বাড়ির দেয়াল । আমার মা আবার বেশ যত্ন করে সব সময় দেয়ালটা মাটি ও গোবর দিয়ে লেপন করে রাখলেও আমার কাজ ছিল পরিষ্কার সে দেয়ালে অঙ্কন শিল্পের চর্চায় মশগুল থাকা। একবারতো কাজী নজরুলের একটা অবয়বের অনুরূপ একটা ছবি মাটির ওয়ালে খোদায় করে এঁকে ফেলেছিলাম । এ নিয়ে মায়ের অল্প স্বল্প বকুনি শুনতে হোলেও পরে সবাই যখন প্রশংসা করতো তখন দেখতাম অমন বকার অন্তরালে ছেলের সৃষ্টিশীল কাজে মায়েরও অব্যাক্ত সাঁয় ছিল । আজ মনে পড়ছে, একবার আমাদের দেয়ালে পঙ্খিরাজ ঘোঁড়ার পিঠে এক রাজকুমারের বিশাল করে ছবি আঁকলাম । কে জানি, দাদির মুখে কোন এক রাতে রাজকুমারী আর পঙ্খিরাজ ঘোড়ার ঘুম পাড়ানী সে রূপকথার গল্প শুনে শৈশবে আমার মনে হয়তো অমন ভাবের উদয় হয়েছিল ।

এরপর পুকুর পাড়ের এঁটেল মাটি নিয়েও পড়ে থাকতাম সুযোগ পেলেই । একবারতো কাদা দিয়ে একটা রয়েল বেঙ্গল টাইগার বানালাম । যদিও সেটা দেখতে সুন্দর একটা ডোরাকাটা বাঘের বদলে বিড়ালের মত দেখতে হয়েছিল । তবে মুসলমান ছেলে হয়ে মাটির মুর্তি বানানো নিয়ে অনেকেই কথা উঠালে আমি তো বেশ চিন্তায় পড়ে গেলাম । কারন, এখন অনেক খাটুনী করে বানানো সে মাটির তৈরী বাঘটাকে রাখি কোথায় । ঘরে রাখলে তো আবার সে ঘরে নামাজ কালাম হবেনা এবং ফেরেশতাও প্রবেশ করবেনা । তারপর মাথায় একটা আইডিয়া ভর করলো সেটা হলো ঐ মাটির বিড়ালটাকে টিনের চালায় উপরে ফিট করে ফেললাম । তবে মজার ব্যাপার হলো হঠাৎ দেখি রাতে টিনের চালে ইঁদুরের উৎপাত একেবারে বন্ধ । কে জানে জোছনার আলোয় রাতের বেলায় সে মাটির বিড়ালটিকেই হয়তো দুষ্ট ইঁদুরের দল সত্যিকার বিড়াল ভেবে ভুল করতো ।

তারপর একেবারে ছোটবেলা বাজারে বায়স্কোপ দেখেছিলাম এরপর নানবাড়ীর টেলিভিশন । এবার মাথায় সারাক্ষণ একটা চিন্তা ঘুরপাক খেতে থাকলো, কেমনে একটা খেলনা টেলিভিশন বানানো যায় আর পাড়ার আমার বয়সী অন্যদেরকে চমকে দেয়া যায় । কারন, সেসময়ে অজো পাড়াগাঁয়ে আমাদের হাতে তেমন কোন খেলনা জুটতনা । বড় জোর বেয়ারিংয়ের তিন চাকার ঠেলা গাড়ী, পৌষের মেলার ব্যাঙ্গের গাড়ী, বাঁশের ঝাঁকার চাখের রিং অথবা পুরাতন সাইকেলের টায়ার উল্লেখযোগ্য । যাহোউক, পুরাতন মুড়ির টিনের কৌটা কেটে তার মধ্যে রঙ্গিন পত্রিকার ছবিগুলো পর পর কেটে ভাতের আঠা দিয়ে সেগুলোকে লম্বা ফিল্মের মতো করে জুড়ে দিলাম । এবার দুইটা সোলার কাঠীতে উপর নিচে করে রোল করে ঘুরাতে থাকতাম তাতে পর্দায় একের পর এক দৃশ্য অবতারনা হতো ঠিক যেন টেলিভিশন।

আবার ছেলেবেলায় আমার কিছু বিষয় ছিল একেবারে ব্যতিক্রম কিছুটা বুদ্ধি প্রতিবন্দী ছেলেমেয়েদের মতই । যেমন, গ্রীস্মের চিটচিটে গরমে একসময় মনে হলো গাছের উপর মগ ডালে বসে বই পড়লে কেমন হয় । যেই ভাবা সেই কাজ, মাঝারী সাইজের আম গাছে উঠে বই নিয়ে পড়তাম কারন এতে সুন্দর একটা ঠাণ্ডা আবহাওয়া পাওয়া যেত অনেকটা এসির মতই । একবার হঠাৎ মাথায় আসলো ঝোঁপের মধ্যে লতাপাতা দিয়ে খেলা ঘর বানিয়ে সেখানে বই নিয়ে পড়লে কেমন হয় । সেটাও বাস্তবে করে দেখলাম তবে এসব আয়োজন দেখে ভুল করেও ভাববেন না যে শৈশবে আমি একজন পড়ুয়া ছাত্র ছিলাম । আসলে পড়তে বসার নামে বই সঙ্গে রাখা হলো আব্বাকে দেখানো যে আমি পড়ছি ।

এরপর আমি যখন ক্লাস সিক্স কিংবা সেভেনের ছাত্র তখন গ্রামে প্রথমবারে বিদ্যুৎ আসলো । এবার ইলেকট্রিক অয়ারিং করতে বাড়িতে যে মিস্ত্রি আসলো আমি তার পাসে বসে বেশ মনোযোগ দিয়ে সবকিছু দেখে নিলাম । এরপর নিজের বাড়ী সহ পাড়া প্রতিবেশীর বিদ্যুতের ছোট খাট সমস্যা কিংবা নতুন সংযোগ দেয়ার কাজে বন্ধু বান্ধবের বাড়িতে পর্যন্ত ইলেক্ট্রিক্যাল কাজ করে দিতাম স্বইচ্ছায় । এরপর অষ্টম শ্রেণীর বিজ্ঞান বইয়ে সম্ভবত প্রথমবারের মত বৈদ্যুতিক বাল্ব নিয়ে পড়লাম । এরপর মাথায় ভুত চাপলো যে করেই হোউক একটা বৈদ্যুতিক হিটার বানাবো । তাই কিছু পরিত্যাক্ত বৈদ্যুতিক তার কয়েল করে পেঁচিয়ে নিলাম এরপর মাটি দিয়ে বানানো একটা প্লেটের মাঝে বসিয়ে সেখানে দিলাম বৈদ্যুতিক কানেকশন । তাতে যা হবার তাই হইল বুম করে বিকট এক আওয়াজ দিয়ে মেইন সুইজের ফিউজ গেল জলে । কারন, হিটারের কয়েল দেখতে সাধারন তারের কুণ্ডলী মনে হোলেও সেটা যে আসলে টাংস্টেনের নামক ধাতুর তৈরি সেটা কে জানতো ।

বড় হলে এমনকি এখন পর্যন্ত আমার মা-বোনদের সাথে সাথে ইদানিং আমার বউ পর্যন্ত টিজ করে এই বলে যে আমি নাকি ছোটবেলায় রাস্তায় বের হলে হঠাৎ রাস্তার মাঝে দাড়িয়ে গিয়ে আকাশের দিকে তাকিয়ে আঙ্গুল দিয়ে কিছু একটা গুনতাম । একবার রাজশাহী চিড়িয়াখানায় বেড়াতে গিয়ে আব্বার কাছ থেকে কখন জানি অন্য এক লোকের হাত দরে দিব্যি চলে যাচ্ছিলাম । এরপর গ্রামের বাজারে স্বর্ণকারের দোকানে গহনা বানানো অথবা সাইকেল মেকানিক্সের দোকানে বসে বসে তাদের কাজগুলো দেখতে খুব মজা পেতাম । আর একবার অমন কাজে মন দিলে তো হইছে একদম বাড়ি আসার কথায় ভুলে যেতাম । এ নিয়ে আব্বার কাছে বাজার সদায় করতে যাওয়ার পথে কোন কিছুতে চোখ আটকে গেলে মনের অজান্তেই সেখানে অনেকটা সময় ব্যয় করে ফেলতাম আর প্রায় সময়ই এ নিয়ে অনেক বকুনি খেতে হতো ।

তছাড়াও আমি সময় সুযোগ পেলেই বন জঙ্গলে পোড়া মাটির গুলতি দিয়ে পাখী শীকার অথবা লোহার সরু সিকের তৈরী কোঁচ দিয়ে রাস্তার দু-পাশে সকাল বিকেল টহল দিয়ে খলশে অথবা টাকি মাছ শীকার করে বেড়াতাম । আর আমার এমন চপলতার জন্যে আমার স্কুলের শিক্ষকমণ্ডলী তথা এলাকার অনেক মানুষ যারা আমাকে নিজ চোখের সামনে বড় হতে দেখেছেন তাদের অনেকেরই মাথায় একটাই প্রশ্ন এমন চঞ্চল প্রকৃতির ছেলে বড় হয়ে কি করে বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক বনে গেল যা হিসেবের খাতায় একদমই বেমানান । কারন, স্কুলের রেকর্ড বুকে অনেক বাঘা ছাত্রের মত আমার বিশেষ কোন উল্লেখযোগ্য প্রাপ্তি ছিলনা বললেই চলে । যাহোউক, পাকারাম সিনেমার ‘তপু’ চরিত্রটা অনেকটায় সেরকম । তাই সিনেমাটি দেখে খুবি মজা পেলাম আর কিছুক্ষণের জন্যে হোলেও শৈশবে ফিরে গিয়েছিলাম । পরিশেষে, ধন্যবাদ Tushar K Paul কে এত সুন্দর একটা সিনেমার সন্ধান দেবার জন্য ।

ভবিষ্যতে মানুষে নয়, সর্বত্র মিলবে যন্ত্রনির্ভর সেবা!

অদুর ভবিষ্যতে মানুষ যে কাজ হারাবে ইতোমধ্যেই আমরা উন্নত দেশে বসে তার কিছু নমুনা পেতে শুরু করেছি । শিল্পক্ষেত্রে অটোমেশন এমন কোন নতুন বিষয় নয় । এমনকি দৈনন্দিন জীবনে ব্যংকের ATM বুথে স্বয়ংক্রিয়ভাবে টাকা উঠানো কিংবা অটোমেটিক ভেন্ডর মেশিন থেকে ড্রিঙ্কস কেনার মত ছোটখাটো বিষয় হয়তো আমাদের নজর এড়িয়ে যায় । তবে উন্নত দেশগুলোতে ইতিমধ্যেই অত্যাধুনিক অনেক কিছুর পরিবর্তন চোখে ধরা পড়ছে ।

মাত্র ৫ মাস হলো হংকং এসে এরই মধ্যে আমার ক্যাম্পাসের ভেতরে বেস কিছু পরিবর্তন লক্ষ্য করলাম । যেমন নতুন ক্যান্টিনে মোবাইল এ্যাপ্স-এর মাধ্যমে খাবার অর্ডার করার মত সুদিধা, যাতে অফিস থেকে ক্যান্টিনে গিয়ে খাবার পেতে পেতে ১০ থেকে ১৫ মিনিটের টাইমটুকুও নষ্ট না হয় । কিংবা, ক্যান্টিনে রাখা বিশাল ডিসপ্লে দেখে খাবারের মেনু (চিত্র-১) পছন্দ করার জন্য অথবা বিল মেটানোর (চিত্র-২) মত কাজে আর মানুষের দরকার হচ্ছেনা ।


চিত্র-১ঃ HKUST ক্যাম্পাসের নতুন ক্যান্টিনে খাবারের মেনু পছন্দ করতে বিশাল ডিজিটাল ডিসপ্লে

চিত্র-২ঃ আমাদের HKUST ক্যাম্পাসের নতুন ক্যান্টিনে সম্পুর্ন মেশিন নির্ভর খাবার অর্ডার এবং বিল পেমেন্ট কাউন্টার

HKUST ক্যাম্পাসের ফিউশন সুপারশপে বাজার শেষে চাইলে আপনাকে আর লাইন ধরে বিলিং কাউন্টারে দাঁড়াতে হবেনা । তার কারন, বাজার শেষে নতুন ডিজিটাল কাউন্টারে আপনি চাইলে সরাসরি মেশিনেই বিল মেটাতে পারেন (চিত্র-৩)। আবার ক্যাম্পাসের ম্যাকডোনাল্ডসেও একি ব্যাবস্থা বিদ্যমান । এসবি গত দুই থেকে তিন মাসের ব্যাবধানে ঘটেছে ।


চিত্র-৩ঃ ডিজিটাল কাউন্টারে ক্রেতা বিল মিটাচ্ছেন, ফিউশন সুপারশপ, HKUST ক্যাম্পাস, হংকং

চিত্র-৪ঃ মালিকবিহীন ডিজিটাল সাইকেল যা কিনা ঘণ্টা চুক্তিতে চাইলে পর্যটকরা ভাড়া করতে পারেন, হংকং

তার চেয়ে মজার ব্যাপার হলো ‘ডিজিটাল সাইকেল’ । কদিন আগে আমরা হংকং-এ অধ্যায়নরত বাংলাদেশী ছাত্ররা মিলে আনন্দ ভ্রমন সাথে BBQ Party করতে গিয়েছিলাম এক সমুদ্র সৈকতে । সেখানে আমরা দেখতে পাচ্ছিলাম যে, লোকজন ঘণ্টা চুক্তিতে সাইকেল ভাড়া নিচ্ছে । আমরা কয়েকজন ভাবলাম সাইকেল চালিয়ে এলাকাটাতে ঘুরতে মন্দ লাগবেনা । অনেকক্ষণ হাঁটলাম কিন্তু কোন সাইকেলের মালিকরে খুঁজে পেলামনা । পরে এক দোকানদার ভাইকে জিজ্ঞেস করলাম তখন সে বলল, “ঐযে দেখছেন সাইকেলগুলা ওখানে স্ট্যান্ড করা সেগুলো আসলে ডিজিটাল সাইকেল (চিত্র-৪)। মালিক ঘরে বসে তার স্মার্টফোনে এগুলা দেখাশুনা করছেন । আপনি প্রথমে সাইকেলের পেছনে দেয়া বারকোড স্ক্যান করে একটা এ্যাপ্স ডাউনলোড করেন তারপর সেখানে একটা অনলাইন ফরম পুরন করে কত ঘণ্টা ভাড়া নিতে চান সে অনুযায়ী অনলাইনে বিল পরিশোধ করেন । তারপর দেখবেন সাইকেলের লক স্বয়ংক্রিয়ভাবে খুলে যাবে । এবার সময়মত আপনি আপনার সাইক্লিং শেষে সাইকেলটি পার্কিংলটে জমা দিয়ে চলে যেতে পারবেন ।”

যদিও চিত্র-৬ এবং চিত্র-৭ এর বাকি জিনিসগুলো অনেকের কাছেই নতুন কিছু নয় । অনেকে ইউরোপ/আমেরিকায় সেগুলোর ব্যবহার অনেক আগে থেকেই দেখতে অভ্যস্থ । কিন্তু যাদের অমন সৌভাগ্য এখনো হয়নি তাদের জন্য শেয়ার করলাম । যেমন হংকং এর মত শহরে ৬৫০০ ডাবল ডেকার পাবলিক বাস (চিত্র-৫) আছে যেগুলো চলছে শুধুমাত্র একজন চালকের মাধ্যমে । বাসে উঠার সময় যাত্রীরা তাদের কাছে থাকা অক্টোপাস নামের ডিজিটাল কার্ডের মাধ্যেমে গেইটে রাখা একটা মেশিনে টাচ করিয়ে ভাড়া মেটাচ্ছেন । আগামীদিনে সেলফ ড্রাইভিং টেনোলজি চালু হলে সে চালকেরও হয়তো আর প্রয়োজন হবেনা ।


চিত্র-৫ঃ ডাবল ডেকার পাবলিক বাস, হংকং (৬৫০০ এমন বাস সারাদিন শহরটাকে সেবা দেয়)

চিত্র-৬ঃ পাতাল ট্রেইন, হ্যানগ হাউ এমটিয়ার স্টেশন, হংকং

একইভাবে পাতাল ট্রেইনগুলোতেও (চিত্র-৬) টিকেট কাটার প্রয়োজন নেই । একি কার্ডে টাকা ভরে ইচ্ছে মত ট্রাভেল করেন কোন টিকেট মাস্টারও নেই তাই নেই কোন হয়রানি কিংবা দুর্নীতির মত বিষয় ।

শিক্ষকতা পেশার আড়ালে...!

প্রশ্ন হলো শিক্ষকতা কি আসলেই মহৎ একটি পেশা ? অবশ্যই; এতে দ্বিমত পোষন করবার মত কোন সুযোগ নেই । তবে বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে বলতে পারেন ইহা একটি অপেক্ষাকৃত মহৎ পেশা । আবার এটাও বলতে পারেন যে অন্য আট-দশটা পেশার চাইতে নিঃসন্দেহে ভালো । নিজে একজন শিক্ষক হয়েও এমন স্পর্শকাতর বিষয় নিয়ে কথা বলার কারনগুলো তবে বলছি শুনুন।

পর্দার আড়ালে এ পেশায় কি কি চলে আজ একটু শেয়ার করবো । আমি নিজেও এ পেশার সাথে যুক্ত আছি বলেই হয়তো দেশে/বিদেশের নামিদামী স্বনামধন্য শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে (সরকারী এবং বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয় মিলিয়ে) অনেকের করা অনেক অনিয়োম খুব কাছ থেকে দেখার সৌভাগ্য হয়েছে বলতে পারেন। আর সেগুলোর অনেক কিছুই নিজের কাছে গ্রহণযোগ্য মনে হয়নি । বার বার বিবেকের তাড়নায় ভুগেছি আর ভেবেছি তবে কি এ মহৎ পেশার সাইনবোর্ডের আড়ালে আমরা সমাজের বাকি লোকেদের মতই অসৎ আচরন করে যাচ্ছি ।

মাফ করবেন এ লিখার উদ্দেশ্য কোন ব্যাক্তি কিংবা প্রতিষ্ঠানকে হেও প্রতিপন্ন করবার জন্য নয় বরং সারাদেশ তথা পৃথিবীতে এই শিক্ষকতা পেশার সাথে সম্পৃক্ত কিছু মানুষের সাথে চলার মাঝে অভিজ্ঞতা শেয়ারিং বলতে পারেন । তবে যদি কারও সাথে এহেন কর্মকান্ড মিলে যায় তার জন্য আমি ব্যাক্তিগতভাবে ক্ষমা চেয়ে নিচ্ছি । সেই সাথে কায় মনোবাক্যে আপনার/আপনাদের প্রতি বিশেষ অনুরোধ নিজেকে আয়নার সামনে দাড় করিয়ে একবার হোলেও জিজ্ঞেস করবেন আর সম্ভব হলে নিজেকে পরিবর্তন করবার চেষ্টা করতে পারেন । এতে আপনার নিজের লাভ, আপনার স্নেহের শিক্ষার্থীদের লাভ, আপনার শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের লাভ তথা গোটা জাতীর জন্য কল্যানকর হবে বলে মনে করি ।

প্রথমেই অনিয়োমগুলোকে বিশেষ কয়েকটি ভাগে ভাগ করে ফেলি তারপর মূল আলোচনায় ফিরে যাব; আশা করছি এতে আপনাদের বোঝার জন্য সুবিধে হবে ।

ক্লাসের লেকচার/প্রজেক্ট/এসাইনমেন্টে ফাঁকি দেওয়াঃ

ক্লাসের লেকচার/প্রজেক্ট/এসাইনমেন্টে ফাঁকি এসব ব্যাপারতো শুধু ছাত্র-ছাত্রীদের জন্য প্রযোজ্য হবার কথা । তবে দুঃখের বিষয় হলো বেশীরভাগ শিক্ষক মহোদয়গন (শুধু দেশেই নয় বিদেশেও) মাঝে মধ্যেই তাদের মুল দায়িত্বটায় ভুলে যান । পর্যাপ্ত প্রস্তুতি ছাড়ায় ক্লাসে চলে যান । এতে করে তার নিজের যেমন লেকচার পরিবেশনে কনফিডেন্স থাকেনা সাথে ছাত্রদেরও ক্লাসে তেমন কোন মনোযোগ থাকেনা । এই সমস্ত পরিবেশ সামাল দিতে সে সব শিক্ষকেরা আবার খুবই বাকপটু । যেমন ধরুন মহামান্য শিক্ষক তার একটি গুরুতবপুর্ন ক্লাসে হঠাৎ করেই রসাত্বক প্রেমের গল্প অথবা ধর্মীয় কোন বিষয় নিয়ে অছিয়ত নামা পাঠ করা শুরু করলেন। এহেন কর্মে ছাত্রছাত্রীরা ক্লাস ফাঁকি দিতে পেরে সেতো মহা খুশি । তবে একটা ব্যাপার জেনে রাখবেন যে, আজ আপনি যত বিনোদন পরিবেশন করেন না কেন, ঐ ক্লাসের শেষ বেঞ্চের ছাত্রটাও ততক্ষনে বুঝে গেছে যে আপনি ক্লাসে একটা বিরাট ফাঁকি মারলেন । আর যে কারনে আজকের হাসি খুশি আপনার স্নেহধন্য সেই ছাত্রছাত্রীরাই তাদের পরবর্তী জীবনে আপনাকে নিয়েই একদিন হাসাহাসি করবে যেটা হয়তো ঘুণাক্ষরেও আপনার কান অবদি পৌছাবেনা কোনদিন ।

আবার আপনি ক্লাসে এসাইনমেন্ট জমা নেন ঠিকি তবে, সেটা শুধু নিয়োম রক্ষার জন্যই । কোনদিন সে এসাইনমেন্ট বা প্রজেক্ট জমা নেয়ার পরে খুলে দেখা হয়না । যার কারনে ছাত্ররা সে এসাইনমেন্টের ফিডব্যাক পাইনা । তাতে যা হবার তাই হয়, সুযোগ বুঝে অনেক সময় ছাত্ররা শুধু কভার পেইজটা পরিবর্তন করেই জমা দেয় । যেটাকে আমি বলবো নিজ দায়িত্বের প্রতি চরম অবহেলা, এতে ছাত্রদের মাঝে ভুল করেও শেখার যে একটা সুযোগ তা বিঘ্নিত হয় । তবে সেক্ষেত্রে শিক্ষকদের এক তরফা দোষী করবোনা শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেরও দায়িত্ব আছে । যেমন ক্লাসের সাইজ খুব বড় হলে কিংবা অতিরিক্ত কোর্স লোড দিলে একজন শিক্ষকের সদিচ্ছা থাকা সত্তেও বাস্তবে অনেক কিছুই প্রয়োগ করা সম্ভব হয়না । আবার জীবনে এমনও শিক্ষকের কথা শুনেছি যে কিনা খাতা না দেখেই রেজাল্ট জমা দিতো । তবে মাত্রাতিরিক্ত অনিয়োম প্রকৃতিও সহ্য করেনা বলেই হয়তো পরবর্তীতে উনি খুব বেশীদিন চাকুরী করতে পারেননি । সে কেলেঙ্কারি মাথায় নিয়ে ভদ্রলোকের চাকুরীটায় চলে গেছে শেষে ।

পরীক্ষার নম্বর প্রদানে পক্ষপাত দৃষ্টিঃ

শ্রেনীকক্ষে বিশেষভাবে দেখতে সুন্দর আকর্ষনীয় ছাত্রীদের প্রতি অনেক শিক্ষকেরই আবার দুর্বলতা প্রকাশ পায় । তবে এদের সংখ্যা কেন জানি তরুণ শিক্ষকের চেয়ে আপেক্ষাকৃত বয়স্ক শিক্ষকদের মধ্যে বেশী লক্ষ্য করা যায় । স্কুল, কলেজ কিংবা বিশ্ববিদ্যালয়ে যেখানেই বলেন না কেন এ ধরনের শিক্ষকেরা সর্বদায় ছিল হয়তোবা আগামীতেও থাকবে । বিশ্বাস না করতে চাইলে চোখ বন্ধ করে একবার নিজের স্কুল কলেজের বিশেষ কিছু শিক্ষকদের কথা মনে করে দেখুন না, আশাকরি সে স্যারের চেহারাটা এতক্ষনে আপনার চোখের সামনে ভেসে উঠেছে।

এছাড়াও আজকাল ম্যাডামদের মধ্যে কিছু জিনিস লক্ষ করা যায় যেমন ক্লাসে ম্যাডামদের অত্যন্ত কাছের মানে ক্লাস রিপ্রেজেন্টেটিভ (CR), সময়ে অসময়ে অনেক ফারমায়েস পালন করে থাকে । আর সে কারনে তাদের প্রতি ম্যাডামদের নিজেদের আজানতেই আলাদা পক্ষপাত দৃষ্টি থাকে । অনেক সময় পরীক্ষায় খারাপ করলে নিজেরাতো পার পেয়ে যায়ই উপরন্তু কখনো কখনো কাছের বন্ধু কিংবা গার্ল ফ্রেন্ডের জন্যও ম্যাডামদের কাছে করুন আবদার আসে যাতে করে ভালো একটা গ্রেড দেওয়া হয় । তার চাইতেও বড় ব্যাপার হলো ইদানীং ক্লাসে স্যার/ম্যাডামদের জন্মদিন পালনে এক রকমের অসুস্থ উৎযাপনও চলে । আবার ম্যাডামদের মধ্যে এ নিয়ে রীতি মতন প্রতিযোগীতা চলে । ধরেন, এই বছরে কোন ম্যাডামের জন্মদিনে সর্বোচ্চ কতটা কেক কাটা হলো । সবচেয়ে বেশী কেক কাটার অর্থ হলো ছাত্র-ছাত্রীদের মনোনয়নে উনি হলেন সে বছরের সেরা শিক্ষক/শিক্ষিকা ।

আমি নিজেও বিশ্বাস করি ছাত্র-ছাত্রীদের সাথে বন্ধু সুলভ সম্পর্ক থাকা খুবই জরুরী । কারন তাতে শিক্ষাদান সহজ হয় তবে বিশেষ কারো প্রতি নিয়োম বহির্ভূত পক্ষপাত দৃষ্টি কোনভাবেই সমর্থনযোগ্য হতে পারেনা । তাই, আমাদের সকলেরই এ ব্যাপারে যথেষ্ট সচেতন হওয়া খুবি দরকার ।

যৌন নিপীড়নঃ

বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের দ্বারা ছাত্রীদের যৌন নিপীড়ন এর বিষয়টি আজকাল ফেসবুকে প্রায়শই ফলাও করে আলোচনায় আসছে । এইটা চলমান সময়ে খুবি দুঃখজনক এবং স্পর্সকাতর একটা ব্যাপার । এ বিষয়ে অপরাধী যেই হোউক সরকারী/বেসরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের অথিরিটির উচিত হবে জিরো টলারেন্স নীতি অবলম্বন করা । দু-একটা চাক্ষুষ ডিসিপ্লিনারী এ্যাকশন হাতে নিলে বাকি লোকেরা এমনিতেই সাবধান হয়ে যাবে । তাতে এমন গর্হিত কাজ করবার আগে অন্যরা অন্তত দশবার ভাববে । এখানে সমস্যা হলো অনেকে বিষয়টা ধামাচাপা দিতে চান এবং অনেক ক্ষমতাধারী ব্যাক্তিরা অপরাধীদের নানাভাবে আশ্রয়-প্রশ্রয় দিয়ে থাকেন । আর একরানেই এত কিছুর পরেও ব্যাপারগুলো এখনো চলমান ।

অফিসে কনসালটেন্সি কাজ নিয়ে মেতে থাকাঃ

স্কুলের কোচিং ব্যবসা নিয়ে যদি শিক্ষকদের বিরুদ্ধে সাংবাদিকরা কলম ধরতে পারেন তবে সরকারী বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের প্রাইভেট ভার্সিটিতে ক্লাস নেয়া কিংবা অফিসে বসে নিজ কনসালটেন্সির কাজ করা নিয়েও প্রতিবেদন লিখতে পারেন । কিছু শিক্ষকরা হয়তো ভুলে গেছেন কর্মক্ষেত্রে দায়-দায়িত্ব পালনে অবহেলা করলে কিংবা অফিসে বসে ব্যাক্তিগত কাজ করলে সারা মাসে আয়টায় যে আর হালাল থাকেনা । অথচ, ধর্ম-কর্ম নিয়ে অনেকেই অসিয়ত নামা পেশ করতে ব্যাস্ত থাকেন । দুনিয়ার কাজের কথা বাদ দিলাম ধরেন ক্লাসের সময় একজন শিক্ষক যদি ক্লাস না নিয়ে তার রুমে ধর্মগ্রন্থ খুলে অধ্যায়ন শুরু করেন সেটাও কি সৃষ্টিকর্তার নিকটে গ্রহণযোগ্য হবে । তা যদি না হয় তাহলে ছাত্র-ছাত্রীদের প্রাপ্য অধিকার বঞ্চিত করে আপনার অন্য কোন কাজ করা অবশ্যই যুক্তিসঙ্গত নয় । আপনার ফিল্ডে এক্সপার্ট হিসেবে আপনি কনসালটেন্সি কাজ করবেন সেটাই স্বাভাবিক তবে, সেটা যেন এক তরফা টাকা ইনকামের ধান্দা না হয়ে বসে । সুষ্ঠভাবে আপনার দায়-দায়িত্ব পালনের পরেও আপনি চাইলে আপনার পেশাগত দক্ষতা কাজে লাগিয়ে বাড়িতি টাকা কামাতে পারেন সে জন্য আপনার শরীরের বাড়তি ঘামটাও ঝরা চাই । আপনার ব্যাক্তিগত কিংবা পেশাগত কাজ আর কর্মক্ষেত্র যেন মিলেমিশে সেই ‘রথ দেখা আর কলা বিক্রির’ গল্পে রূপ না নিয়ে ফেলে সেদিকে লক্ষ্য রাখা বাঞ্ছনীয় ।

গবেষনায় অনিয়োমঃ

গবেষনায় অনিয়োম বিষয়টা সাধারন অনেকের জন্য অজানা অথবা নতুন । তবে, এ কাজ কমবেশি দেশী-বিদেশী ছোট বড় সকল বিশ্ববিদ্যালয়ে অনুশীলন হয়ে আসছে বহুকাল ধরে। আমাদের দেশে এমনিতেই গবেষনা হয় কম । যেটুকু হচ্ছে সেখানে অনেকেরই গবেষনার তথ্য-উপাত্ত (ভুয়া/অনির্ভরযোগ্য) । ঘরে বসে অনেকে গবেষনার তথ্য-উপাত্ত কম্পিউটারে মাইক্রোসফট এক্সেল কিংবা পরিসংখ্যান ভিত্তিক সফটওয়ারের কারসাজিতে তৈরি করে থাকেন । অনেকটা নীলক্ষেত থেকে অক্সফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্টিফিকেট প্রিন্ট করার মত ব্যাপার । যেটা শিক্ষকতা পেশায় গুরুতর অনিয়োম কিংবা গর্হিত কাজ বলতে পারেন । এছাড়াও একি কাজ ঘুরিয়ে ফিরিয়ে (কুমীরের সে এক বাচ্চাকে বহুবার দেখানোর গল্পের মতই) বার বার প্রকাশনার প্রবনতা আছে অনেকেরই । ধরুন সাতের সাথে দুই যোগ করলেও হয় নয়; আবার পাঁচের সাথে চার যোগ করলেও হয় নয়; কিংবা আটের সাথে এক যোগ করলেও হয় নয় অথচ, এসবের সবগুলোয় ঠিক । গানিতিক হিসেবে কোনটায় মিথ্যে নয় তবুও এই ধাঁচের সাধারন মানের গবেষনাপত্রে তরুণ গবেষকদের জন্য বিশেষ কোন বস্তুনিষ্ঠ তথ্য-উপাত্ত থাকেনা বললেই চলে ।

আরোও এক রকমের বিষয় আছে যেমন- সেটাকে গবেষনার এথিকসে বলে ‘’সেলামী অথরশীপ’’ । সেলামী অথরশীপ বলা হয় যখন আপনি আপনার গবেষনাপত্র প্রকাশনায় এক রকম বিনা পরিশ্রমে আরেক জনের সাথে অথরশীপ ভাগাভাগি করেন । তবে, জার্নাল/কনফারেন্স পেপার লেখালেখি/ল্যাবেরটরী/ডাটা এনালাইসিস কাজে প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রদান কিনবা কনফারেন্সে প্রবন্ধ উপস্থাপন এর যে কোন একটিতে অংশগ্রহন থাকলে সেটি ভিন্ন কথা । আবার এমনও দেখা গেছে এক বিভাগের শিক্ষক অন্য বিভাগের কোন একটি বিষয় নিয়ে গবেষনাপত্র প্রকাশ করে বসে আছেন । তার মানে এই নয় যে আপনি এক বিভাগের হয়ে অন্য বিভাগের আভ্যন্তরীণ বিষয়ে ক্রশ-ডিসিপ্লিনারী প্রবন্ধ লিখতে পারবেননা । অবশ্যই পারেন তবে, উক্ত গবেষনায় আপনার অবদান আসলেই কতটুকু ছিল তার উপর নির্ভর করে ব্যাপারটা । যেমন আমার নিজের বিভাগে কোন একটি বিষয়ে গবেষনায় একজন ভালো কম্পিউটার প্রোগ্রামারের প্রয়োজন হতে পারে কিংবা দরকার পড়তে পারে একজন ভালো পরিসঙ্খ্যানবিদের আর সেরকম হলে সেটা অবশ্যই গ্রহণযোগ্য । আবার লোকমুখে এও শুনেছি যে কিছু সিনিয়র শিক্ষকগন জুনিয়রদের অফার করেন জার্নালে পাবলিকেশনে যা খরচা লাগে তিনি দিয়ে দেবেন শর্ত ঐ একটায় তার নামটা যাতে কো-অথর হিসেবে পেপারের সাথে জুড়ে দেয়া হয় । এসব অনিয়োম অনেকের কাছেই স্বাভাবিক মনে হলেও শিক্ষকতা পেশায় একজন গবেষক হিসেবে পরিচিত পেতে এমন গর্হিত কাজ করা কোন ভাবেই সমর্থনযোগ্য নয় ।

রাজনীতিতে স্বক্রীয়ভাবে অংশগ্রহনঃ

এই বিষয়ে নতুন করে বলারইবা কি আছে । আপনারা যারা দৈনিক পত্র-পত্রিকা পড়েন, নিয়োমিত দেশ ও জনপদের খোঁজ খবর রাখেন তাদের কাছে এসব নিয়ে আমার চেয়ে ঢের ভালো তথ্য-উপাত্ত আছে । আজ দেখেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের মত কিংবা বুয়েটের মত শিক্ষা প্রতিষ্ঠানেও কত কি ঘটছে শুধু রাজনীতির কারনে সেটা আর নতুন কিছু নয় বরং সকলের কাছেই দৃশ্যমান ।

আগে আমার অবশ্য একটা ব্যাপার জানা ছিলনা যা গতকালের প্রথমআলোতে পেলাম । যেখানে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রফেসর সম্প্রতি কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের ভিসি হয়েছেন। এর আগে তিনি নাকি সরাসরি সরকার দলীয় বিভিন্ন পদে নিযুক্ত ছিলেন । সে বিষয়ে সাংবাদিকদের এক প্রশ্নে কুমিল্লা বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন প্রতিনিধি বলেছেন, “তার রাজনৈতিকভাবে পুর্ব সম্পৃক্ততা ছিল ঠিকই তবে ভিসি পদে যোগ দেবার আগে সেসব পদ থেকে পদত্যাগ করেছেন” । আর বাংলাদেশে একমাত্র ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষকদের নাকি চাকুরীরত অবস্থায় দেশীয় রাজনীতিতে সরাসরি সম্পৃক্ত থাকারও বৈধতা আছে । এই যদি হয় অবস্থা তবে প্রতিটা ক্ষেত্রে যেমন আদালত থেকে শুরু করে পেশাগত সংস্থা/সংগঠন এমন কোন প্রতিষ্ঠান নাই যেখানে লাল দল/সবুজ দল/হলুদ দলের উপস্থিতি নাই । তাহলে রাজনৈতিক কলহ সংঘর্ষ কি বাংলাদেশে হবেনা হবে পৃথিবীর অন্য কোন প্রান্তে।

সবশেষে বাংলাদেশের মানুষ সব যায়গায় আস্থা হারিয়ে ফেললেও শিক্ষকদের জন্য আলাদা একটা সম্মানের যায়গা সর্বদা রেখে দেন অন্য এক উচ্চতায়। বাংলাদেশের সংস্কৃতিতে আজও পুরানো সে গ্রাম বাংলার উপর নীর্মিত চিত্রনাট্যের সেরা চরিত্র ‘মাস্টার মশাই’ । যেখানে ‘মাস্টার মশাই’ মানুষের আস্থার প্রতীক; সহজ-সরল, সৎ, নির্ভীক এবং প্রতিবাদী একটি চরিত্র । যিনি সততার জন্য নিজের জীবনকেও তুচ্ছজ্ঞান করতে দ্বিধাবোধ করেন না (যে চরিত্রগুলোতে প্রবীর মিত্র কিংবা আনোয়ার সাহেবেরা বরাবরই অতুলনীয়)। তাই, আমাদেরও উচিত নিজেদের স্ব-স্ব যায়গায় দাড়িয়ে মানুষের সে বিশ্বাস এবং আস্থার সে যায়গাটুকু অক্ষুণ্ণ রাখা । আমাদের অধিকাংশ শিক্ষকেরাই হয়তো নিজেদের দায়িত্ব-কর্তব্য সচেতন তবে গুটিকয়েক নোংরা মানুষের ছাঁয়ায় সমাজের সবচেয়ে সম্মানিত মহৎ এ পেশাটিও বিবেকের কাছে বারবার প্রশ্নের সম্মুখীন হচ্ছে এই বলে যে, ‘শিক্ষকতা কি আসলেই মহৎ একটি পেশা নাকি সমাজে কিছু সংখ্যক মন্দ লোকের ভালো সেজে থাকার একটা সাইনবোর্ড মাত্র?’

এক দেশ দুই নীতিঃ হংকং এবং ম্যাকাও

হংকং আসার আগে চীনের কতগুলো রাষ্ট্রীয় ব্যাপার সেপার আমার একদমই জানা ছিলনা । তাই যাদের এ বিষয়ে ধারনা কম আশাকরছি এ লিখাটা তাদের জন্যে কিছুটা কাজে আসবে । ‘দেশের মধ্যেই এ যেন আরেক দেশ’ আমরা অনেকেই এ কথা মশকরা করে বলে থাকি । তবে সেটা আসলেও সত্য চীনের বেলায় । হংকং এবং ম্যাকাও নামক চীনের ছোট ছোট দুটি বানিজ্যিক কেন্দ্র আছে যাদের ইংরেজিতে SAR-Special Administrative Area বলা হয়ে থাকে । একই দেশে দৈব নীতি এখানে যেন গল্প নয় একেবারেই সত্যি । SAR এর বিশেষ বৈশিষ্ট্য হলো উক্ত অঞ্চলের সরকার ব্যবস্থা কেন্দ্রীয় সরকার ব্যাবস্থা থেকে সম্পুর্ন স্বাধীন হবে যেখানে পতাকা, মুদ্রা, ভাষা এবং কেন্দ্রীয় ব্যাংক সম্পুর্ন আলাদা হবে । তবে উক্ত অঞ্চলের সরকার কেন্দ্রীয় সরকারের সাথে শুধুমাত্র দুটি নীতিতে এক থাকবে -যেমন বৈদেশিক সম্পর্ক বিভাগ এবং রাষ্ট্রীয় সেনা বাহিনী । এছাড়া তাদের নিজেদের আলাদা আলাদা রাষ্ট্রীয় সীমানা থাকবে যাতে উক্ত অঞ্চলের মানুষ অবাধে এক অঞ্চল থেকে আরেক অঞ্চলে বিনা ভিসায় যাতায়াত করতে না পারে । আর সে কারনে বৃহত্তর চীনের ভিসা পেয়ে আপনি হংকং কিংবা ম্যাকাও প্রবেশের স্বপ্ন দেখলে দারুণ ভুল করবেন । বিনা ভিসায় বিদেশীদের তো প্রবেশাধিকার নাই এমনকি চীনা নাগরিকদের এই দুই অঞ্চলে ঢুকতে হলে আমাদের মতই তাদের ভিসার প্রয়োজন হয় । একিভাবে আমরা যারা হংকং এর ভিসা নিয়ে এখানে আছি আমাদেরও ভিসা ছাড়া বৃহত্তর চীনে প্রবেশাধিকার নাই । একবার ভাবেন ঢাকা আর চিটাগাং যেতে বাংলাদেশীদের জন্য যদি আবার ভিসা লাগতো ব্যাপারটা কেমন বিড়ম্বনার ।

আসলে হংকং দীর্ঘদীন (১৫৬ বছর) ছিল ব্রিটিশ কলোনি হিসেবে । এইতো সেদিন মানে ১৯৯৭ সালে চুক্তি অনুযায়ী ইংল্যান্ড বিশ্ব-বানিজ্যের গুরুতবপুর্ন অঞ্চল হিসেবে খ্যাত হংকং কে চাইনার কাছে হস্তান্তর করে । একই ভাবে ম্যাকাও পর্তুগীজ কলোনি হিসেবে ছিলো বহুদিন । এরপর ১৯৯৯ সালে ম্যাকাওকেও অনূষ্ঠানিকভাবে চীনের নিকট হস্তান্তর করা হয় । হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরকে এশিয়ার বৃহত্তর বানিজ্যিক কেন্দ্র হিসেবে কমবেশী আমরা সবাই চিনি কিন্তু জেনে অবাক হবেন ম্যাকাও এর অবস্থান হংকং কিংবা সিঙ্গাপুরেরও উপরে । ম্যাকাও হলো জনপ্রতি জিডিপি হিসেবে পৃথিবীর তৃতীয় (মাথাপিছু আয় USD$ ৭৩,১৮৭, বিশ্ব ব্যাংকের ২০১৬ তথ্যানুসারে) । তার মানে লূক্সেম্বুর্গ এবং সুইজারল্যান্ডের পরেই যার অবস্থান । তবে এলাকাটি খুবি ছোট (মাত্র ১১৫ বর্গ কিলোমিটার) এবং জাকজমকপুর্ন । এছাড়া ম্যাকাওকে ডাকা হয় এশিয়ার লজ ভেগাস নামে । সারা পৃথিবীতে জুয়া খেলার এতবড় আসর আর দ্বিতীয়টি নেই । সম্প্রতি এক গবেষনায় দেখা গেছে ম্যাকাওয়ের জুয়ার বাজার আমেরিকার লজ ভেগাসের তুলনায় অনূমানিক ৭ গুন বড় । আর বৃহত্তর চীনের আয়তাধীন ম্যাকাও একটিমাত্র এলাকা যেখানে জুয়া খেলা সম্পুর্নরূপে বৈধ । সারা বিশ্বের ধনী ব্যবসায়ী জুয়াড়িরা ম্যাকাও-এ আসেন শুধু জুয়া খেলা এবং তাদের চিত্তবিনোদনের জন্য । আর সে কারনেই এখানে প্রচুর অর্থ লেনেদেন ঘটে থাকে ।

আমার স্বপ্নের দেশও ভুটান!

ভাবছি জীবনে বিদেশে যদি থাকতেই হয় তবে ভুটানে গিয়ে অবস্থান নেব । আপনি হয়তো ভাবছেন উত্তর আমেরিকা, ইউরোপ, অস্ট্রেলিয়া কিংবা কানাডার মত উন্নত দেশগুলো বাদ দিয়ে পছন্দের তালিকায় হঠাত ভুটান কেন? তার কারন, ভুটান হলো পৃথিবীতে একমাত্র দেশ যেখানে প্রতিবছর পরিবেশে মোট কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের বিপরীতে চিরসবুজ প্রকৃতির দারা উৎপাদিত মোট আক্সিজেনের পরিমান বেশী । তার মানে গ্লোবাল ওয়ার্মিং নিয়ে সারা বিশ্ব যখন নাকানি চুবানি খাচ্ছে তখন ভুটানবাসী প্রকৃতির নির্মল ফ্রেশ বায়ু তাদের ফুসফুস ভরে নিচ্ছে । তারাই পৃথিবীতে একমাত্র কার্বন-নেগেটিভ জাতি । আপনি জেনে অবাক হবেন তাদের দেশের মোট আয়োতনের ৭২ শতাংশই সবুজ প্রকৃতি দিয়ে আচ্ছন্ন । অথচ, যেখানে একটি দেশের মাত্র ২৫ শতাংশ বনায়ন হলেই তাকে বসবাসের জন্য পরিবেশেগতভাবে নিরাপদ মনে করা হয় ( আর বাংলাদেশের সেখানে মাত্র ১৮ শতাংশ সবুজ অরন্যে ঢাকা) ।

ভুটানের এমন অর্জন শুধু দৈনন্দিন জীবন যাপনে সে দেশের রাজা সহ সাধারন জনগনের স্বল্প মাত্রায় চাহিদার জন্যই সম্ভব হয়েছে । তাদের অতি অধুনিকতা আর জাঁকজমকপুর্ন জীবনের সখ নেই তবু তারাই পৃথিবীতে সবচেয়ে সুখি জাতি হিসেবে পরিচিত লাভ করেছে । সেই সাথে ভুটানে সাধারন নাগরিকদের শিক্ষা এবং সুচিকিৎসা শতভাগ ফ্রি । ভুটান একদিকে যেমন প্রাকৃতিক গাছপালা দিয়ে ঢাকা আবার অন্যদিকে শিল্পায়ন নাই বললেই চলে । এ বিষয়ে সরকারীভাবে তেমন উৎকণ্ঠা কিংবা উদ্যোগও নেই । তারা বেশীরভাগ জিনিস নিজেরা উৎপাদন না করে বরং অন্যদেশ থেকে আমদানি করে জীবন ধারনেরই পক্ষপাতি । আর সবচেয়ে আশ্চর্য্যজনক তথ্য হলো ভুটানে ক্ষমতাশীল রাজাকে ৬৫ বছর বয়সেই তার ক্ষমতা হস্তান্তর করতে হয় । অথচ, জনপ্রিয়তার শীর্ষে থাকা অবস্থায় নির্দিস্ট্য সময় সীমার দশ বছর আগেই সে দেশের চতুর্থ রাজা Jigme Singye Wangchuck স্ব-ইচ্ছায় মাত্র ৫১ বছর বয়সেই তার ক্ষমতা হস্তারন্তর করেছিলেন যা সারা বিশ্বে নজিরবিহীন । আরও চমৎকার সব তথ্য পেতে নিচের দেয়া লিঙ্কে ভুটানের রাজার দেয়া খুবি সুন্দর এই বক্তব্য শুনে আপনিও অনুপ্রানীত হতে পারেনঃ

সরকারের উন্নয়ন মেলা-২০১৮

আমি কি যে বলবো ভাষা খুঁজে পাচ্ছিনা । চারিদিকে 'উন্নয়ন মেলা-২০১৮' নামক পোষ্টগুলা দেখে খুবি অযৌক্তিক মনে হচ্ছে এবং অস্বস্তিও লাগছে । আমি কোন বিশেষ দলের বিরুদ্ধে নয় বরং সাধারনভাবে চিন্তা করলে এটাকে জনগনের টাকার যথেচ্ছা অপচয় বলেই মনে করছি । প্রকৃত দেশের উন্নয়ন হলে সেটা কি লুকিয়ে রাখার কিংবা বাদ্য বাজিয়ে প্রচার করার মতন জিনিস যে মানুষ সেটা দেখতে পাবেনা । এতকাল পরে এসেও আমারা কোনদিকে এগুচ্ছি সেইটায় বুঝতে পারছিনা ।

আপনাদের মত শুভাকাঙ্খীদের দোয়া আর সৃষ্টিকর্তার অনুগ্রহে জীবনে অনেক বাধা পেরিয়ে গ্রামের এক অতি সাধারন পরিবার থেকে উঠে আজ আমি এই পর্যায়ে এসেছি । সৌভাগ্যক্রমে ছোট এই জীবনে এ পর্যন্ত ইউরোপের ৬ টি (নেদারল্যান্ড, সুইজারল্যান্ড, জার্মানী, স্পেইন, ফ্রান্স, বেলজিয়াম) সহ এশিয়ার ৩-টি দেশ (তুরস্ক, থাইল্যান্ড, চীনের অধীনস্ত হংকং) সর্বমোট ৯-টা দেশের সংস্কৃতি নিজ চোখে দেখা সম্ভব হয়েছে । তবে দুঃখের বিষয় হলো জীবনে যতগুলো পরিপাটি অত্যাধুনিক দেশ তথা বড় বড় বানিজ্যিক শহর দেখলাম তার কোথাও এমন আজব ‘উন্নয়ন মেলা’ সংস্কৃতির দেখা পেলামনা । অথচ আমার সোনার বাংলাদেশে যেখানে এখনো বিদ্যুৎ কখন আসবে তার কোন নিশ্চয়তা নাই । মানুষের মৌলিক চাহিদা এমনকি নিরাপদ পানির পর্যন্ত ব্যাবস্থা নাই । কিছুদিন আগে দেশব্যপী বন্যায় কতকগুলো পরিবার নিঃস্ব হয়ে গেছে তাদের দুবেলা খাবার যোগাড় নাই । শীত এলে যেখানে এখনও হাজার হাজার বেসরকারী সংস্থা/ছাত্র সংগঠনকে কম্বল নিয়ে শীতার্থ মানুষের পাশে দাড়াতে দেখা যায় । আবার জীবনের নিরাপত্তা কিংবা মানাবাধিকার সর্বদায় ভূলুণ্ঠিত সেখানে উন্নয়নের মেলা নামের এ কোন উপহাস মশকরা চলছে জনগণের সাথে । উন্নয়ন মেলার নামে এহেন টাকার অপচয় করতে তাদের এতটুকু বাধলোনা অথচ সেই টাকা দিয়ে জনগনের জন্য কত কিছুই না করা যেত । একবার ভাবেন সারাদেশে এই উৎসবের জন্য সরকারের পকেট থেকে জনগনের কতগুলা টাকা গচ্ছা গেছে । এই বিবেকহীন আনন্দ উল্লাস দেখে এই মুহুর্তে নিজেকে সংযত করেতে পারছিনা কোনভাবেই । এছাড়া নেতাদের পোস্টারিং আর তরণ সাজানো নিয়ে এখন অবদি সরকার কিংবা বিরোধীদল উভয়ের যা আয়োজন চলে সেই ঐতিহ্যের ইবা শেষ কোনদিন হবে সেটাও আমাদের কাছে এখন অবদি অজানা ।

এইবার উন্নত বিশ্বের রাজনীতি কিংবা সরকার ব্যাবস্থা সাথে সম্পৃক্ত বিষয় নিয়ে আমার চোখে দেখা ছোট তিনটা ঘটনা বলবো আশাকরি আপনাদের কাছে খুব ভাল লাগবে ।

প্রথম ঘটনাঃ একবার নেদারল্যান্ডের পোর্ট সিটি (বন্দর নগরী) খ্যাত রটারড্যামে ঘুরতে গেলাম । সিটি সেন্টারে আন্ডার গ্রাউন্ড মার্কেটে ঘুরছি । হঠাৎ দেখি এক ভদ্রলোক বড় দুইটা সাউন্ড বক্স নিয়ে একটা গোল চত্তরের পাশে কিছু একটা বলে লোক জমানোর চেষ্টা করছে । কৌতুহল বসত ভাবছিলাম লোকটা হকার টকার হবে হয়তো । দুঃখের বিষয় হলো কেউ এতটুকু সময় নিয়ে লোকটার প্রতি দৃষ্টি আকর্ষন করছেনা পর্যন্ত। পরে একজনকে বলতে শুনলাম তিনি নাকি সেদেশের রাজনৈতিক দলের পক্ষে দলীয় প্রাচরনা চালাচ্ছেন । আমার ১.৫ বছরের নেদারল্যন্ডের অভিজ্ঞতায় কেউ যদি কখনো জিজ্ঞেস করেন সবচেয়ে আসহায় একজন লোকের নাম স্মরণ করতে তবে আমি নিঃসন্দেহে সবার আগে সেদিনের সেই রাজনৈতিক নেতা লোকটাকেই বেছে নেব ।

দ্বিতীয় ঘটনাঃ ২০১৩ সালের সেপ্টেম্বর মাস, জার্মানীর জাতীয় নির্বাচনের আগে আগে আমি এক গবেষনা প্রজেক্টের কাজের অংশ হিসেবে দীর্ঘ ১ মাস টেকনিক্যাল ইউনিভারসিটি অব ব্রাউন্সভেগ-এর অধীনস্ত একটা গবেষনাগারে কাজ করার সুযোগ পেয়েছিলাম । তখন দেখলাম শহরের নির্ধারিত বলতে গেলে হাতে গোনা অল্প সখ্যক চত্বরে শুধু নির্বাচনের প্রার্থীর যেমন এ্যাঞ্জেলা মার্কেলের একটা মাঝারী সাইজের ছবি আর নিচে জার্মান ভাষায় লিখা চমৎকার তিনটা লাইন (চিত্র-১)। কারন প্রচারণা সংক্রান্ত নীতিমালা বেশ কঠিনভাবে মানতে হয় সেখানে । আর একবার ভাবুন বংলাদেশের নির্বাচনের আগের অবস্থা । যদি এ মুহুর্তে ভালো কোন বিজনেসের আইডিয়া আপনার মাথায় না আসে তবে আপনার এলাকায় নির্বাচনের আগে একটা পোস্টার ছাপানোর ছাপাখানা দিয়ে ফেলতে পারেন । তাতে নিশ্চিত আপনার ব্যবসায় কোন খদ্দেরের অভাব হবেনা ।

চিত্র-১ঃ এঞ্জেলা মার্কেলের সেই নির্বাচনী প্রচারনার একটি ব্যানার

তৃতীয় ঘটনাঃ সেবার ডাচ বন্ধুর সাথে হল্যান্ডের প্রখ্যাত শহর ডেন হেগে অবস্থিত সেদেশের পার্লামেন্ট ভবন আর মিউজিয়ামে গিয়ে কিছু বিখ্যাত চিত্রকর্ম যেমন- Girl with a Pearl Earring by Johannes Vermeer and Café Terrace at Night by Vincent Willem van Gogh, আর সবশেষে ডাচ রাজার বাসভবন দেখতে যাবার প্ল্যান করলাম । মজার ব্যাপার হলো সংসদ ভবনে কোন নিরাপত্তা কর্মী নেই । প্রধান ফটক বলেও কিছু নেই । সোজা সাইকেল চালিয়ে সংসদ ভবন ঘুরে দেখলাম সাথে রাজার বাড়ীর সামনেও একিভাবে কোন বাধা ছাড়ায় ঢুকে পড়লাম (চিত্র-২) । পরে শুনলাম অফিস চলাকালীন সময় গেলে কিংবা দুপুরে খাওয়ার আগে আগে গেলে যেকোনো মিনিস্টারের সাথে বসে খাওয়া দাওয়া আর গপ্প-সপ্প সেরে নেওয়া যায় আর তাতেও কোন বাধা নিষেধ নাই । তবে ভুল করে মিনিস্টারের অফিসে বিশাল রাজকীয় আপ্যায়নের আসা করবেন না । কারন পার্লামেন্ট ঘেঁষে নিচে একটা পার্ক আছে যেখানে খাবার সময় হলে দুপুরে অনেক মিনিস্টার সাহেবরা বাসা থেকে আনা অথবা সুপার সপ থেকে কেনা প্যাকেট ল্যান্স পার্কের বেঞ্চে বসে সেরে নেন । সেক্ষেত্রে আপনিও তার সাথে যোগ দিতে পারেন তবে আপনার খাবারের বিল আপনাকেই পরিশোধ করতে হবে । আর আবহাওয়া ভালো থাকলে বাসা থেকে সাইকেল চালিয়েই বেশীরভাগ মন্ত্রী সাহেবরা অফিসে আসেন । একদম কেন্দ্রীয় কিছু বড় পদ ছাড়া বেশীরভাগ সাংসদের ব্যাক্তিগত কোন নিরাপত্তা প্রহরী পর্যন্ত নাই । শুনলে হয়তো সিনেমেটিক কিংবা রূপকথার মতই লাগে কিন্তু যাদের হল্যান্ড সম্পর্কে বাস্তব অভিজ্ঞতা আছে তারাই শুধু এর সত্যতা অনুধাবন করতে পারবেন ।

চিত্র-২ঃ ডাচ রাজার বাসার সামনে আমি সেদিনের সেই সাইকেল ভ্রমন (হেগ, নেদারল্যান্ড, ২০১৪)

সবকিছু ছেড়ে আজ সরকারের উন্নয়ন মেলার সমালোচনাইবা কেন করছি তার কারন ব্যাখ্যা করছি এখন । আসলে প্রবাসী শ্রমিক ভাইদের কথা বারবার কথাই উঠে আসে । আসলে প্রবাসে শ্রমিক ভাইয়েরাতো কায়িক পরিশ্রম করেন দৈনিক গড়ে ১০ কিংবা ১২ ঘণ্টা । মাস শেষে কষ্ট করে উপার্জিত সব টাকায় পাঠিয়ে দেন পরিবারের কাছে । মনে মনে স্বপ্ন দেখেন দেশ একদিন তাকেও ভালো কিছু দেবে । অথবা বাড়ী ফিরে পরিবারের সাথে বাকি জীবন নিশ্চিন্তে কাটাবেন । সত্যি বলতে আমি নিজেকেও একজন প্রবাসী শ্রমিক বলেই মনে করি । আমার ভাবনাটা একেবারে মিথ্যে নয় । ভাবছেন কেন? আসলে আমি কিংবা আমার মত বিদেশে বৃত্তি নিয়ে উচ্চতর ডিগ্রী নিতে আসা অন্যরাও কাজ করি তবে মাথা দিয়ে । শ্রমিক ভাইয়েদের সাথে পার্থক্যটা ঐ একটা যায়গায় আমরা কাজটা করি ব্রেইন দিয়ে আর উনারা করেন পেশী শক্তি দিয়ে । আমারা হয়তো তাদের চেয়ে ভালো ঘরে ঘুমায় ভালো কিছু খায় । হিসেব করে দেখলে হয়তোবা কিছু আনন্দ ঘন মুহুর্ত তাদের চেয়ে আমাদেরই বেশী । আবার অন্যদিকে ভাবলে আমাদের ত্যাগ কোন অংশে কমও না । যেমন গড়ে দৈনিক ১৫-১৬ ঘণ্টা ল্যাবে গবেষনা নিয়ে কাটাতে হয় । কখনো কখনো তো দিন রাত খাওয়া দাওয়া ছেড়ে শুধু কাজ নিয়ে পড়ে থাকতে হয় । মাথার মধ্যে সায়েন্স/ম্যাথের সূত্র কিংবা গবেষনার চলমান সমস্যা নিয়ে অনেক রাতের শেষ হয় ভোরের আলো দিয়ে । আবার স্কলারশিপের টাকার বড় অংশ আমারাওতো দেশে বাবা-মা কিংবা স্ত্রী ছেলেমেয়েদের জন্যে পাঠিয়ে থাকি । বিনিময়ে আমরাও দেশে একদিন ভালো কর্ম পরিবেশ আশা করি যেখানে আমাদের অর্জিত কারিগরি জ্ঞান নিয়ে ফেরা যাবে নিশ্চিন্তে । নিজের কিংবা পারিবারিক নিরাপত্তা নিয়ে যেখানে মনে কোন সংশয় থাকবেনা ।

অনেকেই খুব সহজে প্রবাসীদের নিয়ে সমালোচনার ঝড় তুলেন । আমরা নাকি বিদেশে এসে দেশে ফিরে যাবার কথা ভুলে যায় । দেশ আমাদের এতকিছু দেয় বিনিময়ে আমারা কিছুই দেয়না । কিন্তু আমাদের জন্য দেশে ফিরে যাবার মত সুযোগ কিংবা সঠিক কর্ম ক্ষেত্রের নিশ্চয়তাটাও থাকা চায় । আজ পর্যন্ত সাধারন নাগরিকদের সামান্য নিরাপত্তাটাও কি সরকার নিশ্চিত করতে পারছে? বলতে দুঃখ লাগে দেশে গেলে টাকা পয়সা কিংবা চাকুরী তো পরের ব্যাপার বিনা দোষে এলাকা ভিত্তিক ছিনতাইকারী কিংবা সরকারী দলের ছোট বড় পাতি নেতাদের হাত থেকে লাঞ্ছিত হবোনা সরকার সেটুকু নিশ্চয়তা দিতেও ব্যার্থ । আমি কোন বিশেষ দলকে দায়ী করছিনা বর্তমান এবং সাবেক উভয় রাজনৈতিক দলকেই সেই প্রশ্নের সম্মুখীন করছি । জানি এসবের কোন উত্তর তাদের কাছে নেই । তবে আমাদের কষ্টে অর্জিত সে অর্থ ব্যয়ে সরকার অবিবেচকের মত কেন বারবার সাঁয় দিয়ে যাচ্ছে সেটা কোনভাবেই বোধগম্য হচ্ছেনা । কিছুদিন আগে রোবট সফিয়ার কথায় যদি বলি তবে সেটাও একটা খাম খেয়ালীর মধ্যেই পড়ে । সবচেয়ে মজার ব্যাপার হলো হংকং সরকার যেখানে আমাদের মত প্রাকৃতিক মেধা (গবেষনারত বিদেশী ছাত্র/ছাত্রী) মাসে মাত্র ২ লক্ষ টাকা বেতন দিয়ে কাজ করাচ্ছে অমন সফিয়ার জন্ম দিতে সেখানে বাংলাদেশ সরকার আর্টিফিশিয়াল মেধা তাও অত্যন্ত সীমিত ভাবে যোগাযোগ করতে সক্ষম একটা রোবট মানবকে হংকং থেকে ১২.৫ কোটি টাকায় ভাড়া করছে মাত্র কয়টা ঘণ্টার জন্য । ঘটনাটা সেই আমার আগের লিখা চামড়া শিল্পের ব্যবসার মতই । ক্ষতিকর সব কেমিক্যাল দিয়ে কাচা চামড়া পরিশোধন করে আমরা সেটা সস্তায় উন্নত বিশ্বের দামী জুতার ব্রান্ডের কাছে বিক্রি করি আর পরে বহুগুণ অধিক মূল্যে ফিনিশ প্রডাক্ট হিসেবে সুন্দর জুতা কিনে ধন্য হই তাদের কাছেই ।

যাহোউক, হাজার হতাশার মাঝেও আমরা আমাদের বাংলাদেশকে জবাবদিহিমূলক একটা সরকার ব্যবস্থা সম্বলিত প্রকৃত উন্নয়ন সমৃদ্ধ একটা সোনার বাংলাদেশ হিসেবে স্বপ্নে দেখি । এভাবে হয়তো আমরা আগামী দিনগুলিতেও রঙ্গিন স্বপ্ন দেখতেই থাকবো । তার কারন স্বপ্নই শুধু পারে মানুষের মনে আশা জাগাতে আর জীবন গাড়ীর চাকা সামনের দিকে চলমান রাখতে ।

সমাজের অবক্ষয়ঃ আজ অনিয়োমেরই জয়!

আসলে একটা সমাজে অনিয়োম বেশীদিন চলতে দিলে সে সমাজে এক সময় অনিয়োমকেই স্বাভাবিক বলে মনে হয় । আজকাল আমাদের সমাজে দুটো লক্ষনীয় সামাজিক অনিয়োম হলোঃ “সুদ আর ঘুষ” । প্রতিটা ক্ষেত্রেই উভয়ের ব্যবহার এতটায় মাত্রা ছেড়ে গেছে যে স্বয়ং সংসদ সদস্যদের মধ্যে অনেকেই সেটাকে বৈধ বলে মনে করছেন (তবে সেটা যেন একটা মাত্রার মধ্যে থাকে) । সত্যি কথা বলতে এ দুটো বিষয় সমাজে আজ পরোপুরি প্রতিষ্ঠা পেয়ে গেছে । এ ব্যাপারে আপনি দ্বিমত পোষন করতেই পারেন তবে নিচের লিখাটি আপনারই জন্যে ।

এক সময় সুদ গ্রহণ করলে সমাজে সে ব্যক্তিকে একঘরে করে রাখা হতো । কিন্তু, এখন সেটা একেবারেই দুধ ভাত হয়ে গেছে । শহরের লোকেরা অবশ্য লেনদেন ব্যাংকের মাধ্যমে করে তাই তাদের বেলায় অপরাধ বোধ নাই বললেই চলে । যেমন ক্রেডিট কার্ড থেকে খরচ করছেন, কখনো গাড়ী অথবা বাড়ীর জন্য ব্যাংক থেকে লোন নিচ্ছেন । পরবর্তীতে মাসে মাসে দিব্যি ইন্টারেস্ট নামে সেই সুদ সহ আসল পরিশোধ করছেন । এতে আপনি বরাবরই সম্মানিত কারন আপনার একটা গাড়ী আছে অথবা ঢাকা শহরে আপনার নিজের একটা ফ্ল্যাট আছে । আর গ্রামের কথাই যদি বলি তবে দরিদ্র সে মাস্টার মশাই অভাবে আছেন সেই আগের মতই । মাস গেলেই তার ছেলে মেয়েদের শহরে রেখে পড়াশুনার খরচা বাবদ অন্যের কাছে উচ্চ সুদে টাকা নিচ্ছেন । এক্ষেত্রে কখনোবা অতি সাধারন কোন সুদের কারবারকারীর কাছে অথবা গ্রামে আজকাল কিছু বনিক সমিতি নামক অর্থিলগ্নি প্রতিষ্ঠান থেকে । তারচেয়েও বড় খবর হলো ছেলে মেয়ের বিয়ের জন্য অনেকে এলাকার প্রতাপশালী ব্যাক্তির কাছে জমি বন্ধক রেখে টাকা নিচ্ছেন । ক্ষুদ্র ঋণ নামক কিছু প্রতিষ্ঠানতো তৎপর আছেই । তাই সমাজে সুদ নিয়ে আজকাল বিশেষ কোন অনুভূতি আছে বলে মনে হয়না । অথচ ধর্মীয়ভাবে সুদকে এতটায় খারাপ কাজের সাথে তুলনা করা আছে সেটা এই লিখায় উল্লেখ করতেও অসস্থি লাগছে (আশাকরি অনেকেরই সেটা জানা আছে)।

এবার ঘুষের কথায় আসি । চাকুরী সংক্রান্ত বিষয়ে টাকার আদান প্রদান বহু আগে থেকেই সমাজে চলমান । এটা আজকাল একটা ঐতিহ্য হয়ে গেছে । এতে কারও কোন যায় আসেনা বরং, নিলামের মত গ্রামের স্কুলগুলোতে বিশেষ করে একটা চাকুরীর পদ শূন্য হলে তাতে কে কত দাম হাঁকিয়ে নিতে পারে সেটা সমাজ তথা সমাজের মানুষ অবলোকন করছে খুব স্বাভাবিক নিয়োমে । অন্যদিকে, ছেলে মেয়ের বিয়ের আগে বিশেষ করে মেয়ের পরিবার যখন খবর নেই ছেলে কি করে । দাড়ি টুপিওয়ালা ঘটক সাহেব বলেন, “পাত্রের চাকুরী তেমন বড় না তবে সরকারী অফিসে কাজ করে (তৃতীয় শ্রেণী) । কিন্তু, মাস গেলে সাইড ইনকাম যা হয় তাতে ছেলের আসল বেতনে হাতই দিতে হয়না ।” অনেক সময় অনেক নির্লজ্জ অবিভাবক তার পুত্রের সে অবৈধ টাকার পরিমান পর্যন্ত বলতে লজ্জাবোধ করেননা । আমি এরকমও ছেলের বাবাকে দেখেছি যিনি চায়ের দোকানে বসে অন্যদের সামনে স্বগর্বে বলছেন যে তার ছেলের মাসে এক লক্ষ টাকা শুধু সাইড ইনকাম আছে । আর এতে প্রতিবেশীরা শুনে বেশ উল্লাসিত আর ওদিকে পাত্রীর বাবার চক্ষুতো কপালে উঠবার জোগাড়। অমন পাত্রের সাথে তাড়াতাড়ি বিয়ের ব্যবস্থা করতে সপরিবারে রামকারবার শুরু করে দিয়েছেন । কারণ, না জানি এই সোনার হরিণ পাত্রটা আবার হাত ছাড়া হয়ে যায় কোনভাবে । এইবার পাত্র কোথায় কি করে কিইবা তার শিক্ষাগত যোগ্যতা এটা বড় কিছু নয় । তাছাড়া প্রতিবেশীরাও আজকাল ব্যস্ত অমন গুণধর প্রতিভাবান ছেলের গুনঙ্কীর্তি নিয়ে যেমন- ছেলে বাড়ি আসলে বিমানে করে আসে নাকি প্রাইভেট গাড়ীতে? তাছাড়া এলাকার মসজিদ/মাদ্রাসা নির্মানেও সে ছেলের অনুদান উল্লেখযোগ্য । এভাবে এলাকায় চায়ের দোকানগুলো অমন আলোচনাগুলাই বারবার গরম চায়ের মতই মানুষের মুখেমুখে টগবগ করে ফোটে । অথচ, সমাজ সেখানে নীরব দর্শক অমন অবৈধ উপায়ে উপার্জনকেও সমাজের মানুষ আজ স্বীকৃতি দিচ্ছে অনায়াসেই।

মোদ্দাকথা, বাংলাদেশের সমাজ ব্যবস্থায় ঠিক আর বেঠিক সংজ্ঞায়িত করা হয় সে কাজটা কে করছে তার উপর ভিত্তি করে । যেমন, আমার বাবা যদি বড় সরকারী কর্মকর্তা হয় আর তার অবৈধ টাকায় কেনা নতুন মডেলের আইফোনটা টপ করে আমার হাতে চলে আসে তবে আমার কাছে তৎক্ষণাৎ সে বাবাই হয়ে ওঠেন পৃথিবীর সবচেয়ে ভালো পাপা । বিবাহ বার্ষিকীতে হীরের লকেট কিংবা কানের দুল অথবা নেকলেস দিলে মুহুর্তে অমন স্বামী হয়ে ওঠে পৃথিবীর সেরা ‘হাবি’ । ছেলে কিংবা জামাই যদি তার খরচায় বাবা-মা অথবা শশুর-শাশুড়ীকে সৌদি আরবে হজ করতে পাঠায় তবে সে ছেলে মুহুর্তেই হয়ে ওঠে জগতের সৎ আর পিতৃভক্ত আদর্শ ছেলে/জামাই । বিপরীতে জামাই কিংবা ছেলে যখন অন্যের হয় তখন আপনি সমালোচনার ঝড় তোলেন । তার বিরুদ্ধে কথায় কথায় আঙ্গুল তুলে বীভৎসভাবে সমালোচনা করেন । তবে সেই একি কাজ যখন আমি আপনি কিংবা নিজের ঘরে বাবা/স্বামী/ছেলে/জামাই রুপী কেউ একজন করছে ঠিক তখনি ব্যাপারটা খুব স্বাভাবিক বলে গণ্য হচ্ছে । তাই আমার মনে হয় কোন বিশেষ পেশার মানুষকে নয়, সারাদিন অমুক তমুকের কুকর্ম নিয়ে কথা নয় বরং আগে নিজের সন্তান, নিজের বাবার, নিজের স্বামীর টাকার উৎস নিয়ে ভাবেন । সৎ পথে আপনার সে মূল্যবান উপহার কেনার মত সামর্থ আপনার স্বামীর/বাবার/ছেলের/জামাইয়ের আদৌ আছে কিনা সেটা যাচাই করেন। আর সেটা করতে পারলেই সমাজের অনেক অনিয়োম দুর হয়ে যাবে আপনাতেই ।

শেষে বাংলা সিনেমার কথা মনে এসে গেল । আশীর দশকে এটিএম সামসুজ্জামান কিংবা আহমেদ শরীফ অথবা এই যুগের মিশা কিংবা ডিপজল চরিত্রগুলোকে পছন্দ করেন এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া যাবে বলে আমার মনে হয়না । তার কারন, তারা নেগেটিভ রোল করেন এবং তাদের পেশাগুলো সাধারনত সামাজিকভাবে নৈতিকতার বিরুদ্ধে থাকে যেমন, অসৎ পুলিশ আফিসার, পলিটিশিয়ান, স্মাগলার, ইত্যাদি । তাই সৎ পুলিশ অফিসার নায়ক মান্না যখন ঘটনাক্রমে সেই সমস্ত ভিলেন চরিত্রগুলাকে সায়েস্তা করে আমরা বাংঙ্গালীরা আবেগে সিনেমা হলে হাতে হাত তালি দিয়ে চিৎকার করে সেটা উৎযাপন করি । অথচ কি অদ্ভুত সেই আমরাই বাস্তব জীবনে ওরকম একেক ভিলেন চরিত্র নিজেদের মাঝেই লালন করছি অবলীলায় । সব নীতি ভুলে ব্যাক্তি স্বার্থে আমরা সেইসব নৈতিকতা বিবর্জিত কাজেই লিপ্ত হচ্ছি হরহামেশাই, তাইনা?।

তাই সবশেষে মনে শুধু একটায় প্রশ্ন - তবে কি? “সততার প্রতীক হা... হা... সেতো শুধু ফিল্মে কলকাতার দাদা রনজিৎ মল্লিক!”

টয়লেট টিস্যু আর বিশুদ্ধ পানির ব্যবহারঃ উন্নত বনাম অনুন্নত দেশ

বড়লোকদের কথায় আলাদা । নিচের দুইটা তথ্য দেখেন—প্রথমটাতে আমেরিকার লোকজনের বসবাসের নমুনা । তা দেখে খুব ভালোভাবে বোঝা যায় যে সারা পৃথিবীতে যা সম্পদ আছে তার ৮৫ শতাংশ ব্যবহার হয়ে থাকে মাত্র ১৫ শতাংশ উন্নত দেশের মানুষের দ্বারা । আর বাকি ১৫ শতাংশ সম্পদ পৌঁছে সারা পৃথিবীর ৮৫ শতাংশ মানুষের কাছে, তার মানে আমরা যারা অনুন্নত দেশে বসবাস করছি । মজার ব্যাপার হলো—যারা কিনা ভৌত সম্পদের যথেচ্ছা ব্যবহারকারী, তারাই আমাদেরকে সম্পদের টেকসয় ব্যবহারে নানামুখী জ্ঞান দান করে থাকেন । সাধারন টয়লেটে টিস্যু ব্যবহারের কথায় যদি বলেন, তাহলে দেখেন আমেরিকাতে জনপ্রতি প্রতি বৎসর ২৩ কেজি টিস্যু ব্যাবহার হয় (তথ্যসূত্র নিচের টেবিল-১-এ দেওয়া হলো) । যেখানে এশিয়ায় মাত্র ১.৮ কেজি আর আফ্রিকার কথা না বলায় ভালো । একদল লোক আমাকে এখনি সবক দিতে প্রস্তুত এবং বলবেন আমেরিকার মানুষ তো ভাই টয়লেটে পানি ব্যাবহার করেন না, সেই জন্য হয়তো এতো বেশী টিস্যু পেপার ব্যবহার হয়ে থাকে (ইউরোপেও টয়লেটে পানির পরিবর্তে শুধু টিস্যু ব্যবহার করা হয়ে থাকে) । মেনে নিলাম আপনার এহেন যুক্তি । এইবার নিচের আরেকটি তথ্য (চিত্র-২) যুক্ত করা হলো যাতে আপনার বোধোদয় হয় খুব তাড়াতাড়ি ।

টেবিল -১ঃ Source: http://dx.doi.org/10.1016/j.watres.2012.08.023

চিত্র-২ -এ দেখা যাচ্ছে যে, পানি ব্যবহারের বেলায়ও গড়ে মাথাপিছু সবার আগে যার নাম সেতো ভাই আমেরিকাই । বাংলাদেশের মানুষ যেখানে গড়ে প্রতিদিন মাথাপিছু পানি পায় ৮৮ লিটার (তাও ফুলানো ফাঁপানো ওয়াসার দেয়া তথ্য, সরেজমিনে হয়তো ৫০ লিটারেরও কম হবে), সেখানে আমেরিকার লোকের দৈনিক পানি ব্যবহারের পরিমান ৫৬০ লিটার । সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হলো—মোজাম্বিক বলে আফ্রিকান দেশটিতে গড়ে মাথাপিছু পানির পরিমাণ মাত্র ৮ লিটার (আপনি আমি যেখানে একবার টয়লেটে গেলে, ছোট কাজ শেষে এক ফ্লাশেই অমন ৭ লিটার পানি নষ্ট করি) । এই সামান্য পানিতে তারা কতটুকুই বা খায় আর রান্না-বান্নার কাজে ব্যবহার করেন । চোখ বন্ধ করে শুধু একবার ভাবেন, তাহলেই অনুধাবন করতে পারবেন । ৮ লিটার পানি যদি হয় সারাদিনের খোরাক, সেখানে গোসল আর টয়লেটের কথা ভাবাটা একেবারেই অযৌক্তিক । শুধু তাই নয়, প্রতিটা বাসায় মেয়েরা স্কুল পর্যন্ত যায় না । তার কারণ, পরিবারে ছেলেরাই শুধু পড়াশুনায় অগ্রাধিকার পায় আর মেয়েরা ব্যস্ত থাকে পরিবারে ব্যবহার্য্য সে পানির যোগান দিতে । গড়ে দিনে ৪ ঘণ্টা সময় ব্যয় করে, বহুদূর গিয়ে পায়ে হেটে কঠোর পরিশ্রম করে সে পানি আনতে হয় । তাই আমার কাছে আফ্রিকান মানুষদের কথা মনে হলে, আলহামদুলিল্লাহ! আমরা বোধ হয় স্বর্গেই আছি । আমার কিছু আফ্রিকান বন্ধু ছিল—ইউরোপে থাকা অবস্থায় । আমি দেখেছি তাদের গায়ের পোষাক, পলেস্টার জাতীয় কাপড়ের । মাথার চুলের জটতো একটা বিরাট সমস্যা আছেই । ছেলে মেয়ে উভয়কেই সারা বছর মাথা ন্যাড়া করে থাকতে হয়, তা নাহলে মাথায় জট পাকিয়ে যায় । সবশেষে, তাদের শরীরের কৃষ্ণবর্ন—যার জন্য তারা সারা বিশ্বে বর্নবাদের শিকার । তাহলে সৃষ্টিকর্তা-ইবা আফ্রিকানদের ভালো কি দিয়েছেন, সেটা হয়তো আমাদের ক্ষুদ্র মগজে ধরবে না ।

চিত্র -২ঃ Source: http://www.data360.org/dsg.aspx?Data_Set_Group_Id=757

হাতে হ্যারিকেন নিয়ে খুঁজছি জাতীয় বিবেক/আদর্শ তোমরা কোথায়?

আজকাল একটা বিষয় আমায় বেশ ভাবাচ্ছে । উন্নত বিশ্ব যত কথা যত নীতি বাক্য আর সমস্যা সমাধানের জন্য প্রতিনিয়ত যতবুলি ছাড়ছে আসলে তারাই তো প্রতিটি সমস্যা সৃষ্টির জন্য দায়ী । যেমন আমেরিকার কথায় যদি বলি তারা নাকি বিশ্ব শান্তির দুত । অথচ কেনা জানে তারা কতটা ধংসাত্তক । শান্তির কথা বলে কিভাবে যুদ্ধ-বিগ্রহে তারা লিপ্ত কিনবা আইএসের মত একটা ভয়ানক সংস্থার রুপকার এমনকি অস্ত্র ব্যবসায় তাদের উপরে কে আছে বলুন ।

আবার টেকশই পরিবেশ (সাস্টেইন্যাবল এনভায়রনমেন্ট) নিয়ে কথা বলতে বলতে মুখে ফেনা তুলে ফেলছেন যে সকল জ্ঞানীগুনি ব্যাক্তি তাদের লাইফ স্টাইল চোখে দেখলে আফসোস করতেই হয় । ধরুন তাদের বসবাসের ধরন, খাবারের মান এমনকি পাঁচ তারা হোটেলের বাহারী পদ (২০০-২৫০ আইটেম) যেগুলির প্রতিদিন সেমিনার সিম্পোজিয়ামের নামে যে বাজেট নস্ট করা হয় তার কথায় একবার চিন্তা করেন । ইদানিং আবার বড় বড় পরিবেশবাদীদের ফ্যাশনের তালিকায় যুক্ত হয়েছে টেসলা ইলেক্ট্রিক্যাল কার । অথচ চার্জ কিন্তু দিচ্ছেন সেই বিদ্যুত দিয়েই । হয়তো সে অতিরিক্ত বিদ্যুতের চাহিদা পুরনে কোন না কোন ফসিল ফুয়েল ভিত্তিক প্ল্যান্টে পুড়ছে ডিজেল আর নির্গত করছে গ্রীন হাউস গ্যাস । আবার সেদিন কিছু জার্নাল আর্টিকেল পড়লাম যেখানে দেখানো হয়েছে সোলার সেল তৈরীতে যে সকল ইন্ডাসট্রি জড়িত তাদের অনেক প্রতিষ্ঠান জার্মান এবং চাইনা ভিত্তিক আর তারাও পলিউশনের জন্য দায়ী । আবার রিচার্জেবল ব্যাটারী চালিত মটর যানের কথায় ধরেন, একটা সময় পর ব্যাটারীর মেয়াদ শেষ হবে । তারপর লেডের মত ভারী ধাতু পরিবেশে মিশে যাবে যদি না তাদের প্রোপার ডিস্পোজাল নিশ্চিত করা যায় ।

আবার উন্নত প্রযুক্তি দিয়ে সাজানো বিশ্ববিদ্যালয়ের কথায় যদি বলি একেক লেকচার থিয়েটারে অন্তত ৩ টা করে প্রজেক্টর ব্যবহার করা হচ্ছে । সামর্থ আছে বলেই এটা একটু বেশী বিলাসিতা নয় । অন্যদের কি বলবো আমার টেবিলেও ৪ টা ইলেক্ট্রনিক্স আইটেম । দুইটা কম্পিউটার একটা স্মার্ট ফোন আর একটা আইপ্যাড । তাও আমি অন্যাদের তুলনায় গরীব আন্সমার্ট ছাত্র বলে । কারন অনেকে ভিডিও গেইমস খেলতে পছন্দ করেন তাদের কালেকশনের কথা নাহয় নাই বললাম । আরো আছে মুভি দেখার জন্য বিশাল স্ক্রিনের ডিস্প্লে আর ব্যক্তিগত প্রজেক্টর । এছাড়াও আছে যেমন আইফোন থেকে ওয়াই ফাই দিয়ে সরাসরি প্রিন্ট করা যাবে এমন ব্যাক্তিগত কালার প্রিন্টার । আবার পরিবেশ বিজ্ঞানের ছাত্র হয়ে একটা যুগান্তকারী টেকনলজি তৈরী করা তো পরের কথা এর আগেই যে পরিমান ক্ষতিকর কেমিক্যাল প্রতিদিন ল্যাবে নষ্ট করছি তা পৃথিবীর আর কয়েক হাজার মানুষের সারা জীবনের করা দূষণের সমান । আবার এত বিশাল ক্যাম্পাস ২৪/৭ খোলা এবং বিদ্যুতের আলোয় আলোকিত । আবার এখানেই কিভাবে বিদ্যুৎ ব্যবহারে সাশ্রয়ী হওয়া যায় কিংবা সচেতনতা বাড়ানো যায় সেগুলো নিয়ে পড়ানো হয় । ব্যাপারটা আসলেই মজার, তাইনা? আর সিটি সেন্টারে আলোক সজ্জার কথা যদি বলি তবে পৃথিবীর নামী দামি শহরে প্রতিদিন কি পরিমানে বিদ্যুতের অপচয় হয় সেটা তো বলা নিস্প্রয়োজন । তার বড় উদহরন মিডল ইস্ট/ইউরোপ/আমেরিকা মত দেশগুলোর কথা চিন্তা করুন । এছাড়া সৌদি আরবের ইসলামী সাহাবীদের জীবনী আর আজকের নেতা আর তাদের ছেলেমেয়েদের রাজকীয় জীবন যাপন আর সম্পদের অপব্যাবহার দেখলে শুধু দুঃখ করা ছাড়া কি উপায় আছে বলেন । শুনেছি তাদের টয়লেটের পানির কল এমনকি কোমডটাও নাকি সোনা দিয়ে মোড়া । সৌদি আরবের রাষ্ট্রীয় একেক সফরে যে পরিমান রসদ আর নারী সঙ্গীদের কথা পত্রিকায় আসে তাতে তাদের নিয়ে আর কিইবা বলার আছে । আদর্শ তুমি কোথায় কাকে দেখে অনুপ্রানীত হবো । তাই আমি আজ শুধুই নির্বাক নিশ্চুপ আনমনে চেয়ে রই ।

একিভাবে যেসব দেশ প্রতিনিয়ত আমাদের সাহায্য সহযোগীতা দিয়ে যাচ্ছে তাদের নাম শুনলেই শ্রদ্ধায় ভেতর থেকে আলাদা আবেগ চলে আসে । আবার পেছনের গল্প শুনলে আতকে উঠি সমানভাবে । যেমন গার্মেন্টস শিল্পের কথায় আসি । আমাদের যে শিল্প নিয়ে এত গর্ব হাইরে বাংঙ্গালী! দেশের সব প্রাকৃতিক সম্পদেকে শেষ করে ফেলছি অবিবেচকের মত । ভাবছিনা আর ২০ বছর পর আমাদেরইবা কি হবে । আপনি জানেন গার্মেন্টস উন্নত বিশ্বে নিষিধ্য, বিশেষ করে ওয়াশিং এবং ডায়িং । কেন জানেন তার কারন তারা খুব ভালো করে জানে এসব শিল্পের ভয়াবহ দুষনের মাত্রা পরিবেশের জন্য কতটা ভায়াবহ । যদি এসব শিল্প তাদের দেশে গড়ে উঠে তবে তাদের দেশ নোংরা হবে । তাই তারা আমাদের কাছে বিক্রি করে তাদের দেশে প্রস্তুত গার্মেন্টসে ব্যবহৃত মেকানিক্যাল- ইলেক্ট্রিক্যাল যন্তপাতি । অথচ বিনিময়ে আমাদেরকে বিশ্ব মানচিত্রে একটি ময়লা ফেলার ভাগাড় রাষ্ট্রে পরিনত করার কি দারুণ ব্যাবস্থা । আমাদের নিজেদের যেখানে বাধছেনা সেখানে ভিনদেশীদেরইবা কেন বাধবে বলুন । আমারা অবশ্য তা মেনেও নিচ্ছি দারিদ্রের কাছে অসহায় হয়ে । এছাড়া কি বা করার আছে এই দুর্ভাগা জাতীর বলুন । গার্মেন্টসের যন্ত্রপাতির কথা বাদ দিলাম আজ আবধি এ শিল্পের সাথে জড়িত গুরুত্তপুর্ন কারিগরি পদগুলো পর্যন্ত দখল করে আছে আমাদের ভারতীয় এবং শ্রীলংকান দাদারা । বিশ্বাস না হলে একটা গার্মেন্টস ভিজিট করে দেখেন । তাদের একেক জনকে ৫ থেকে ১০ লক্ষ কিংবা তার চেয়েও বেশী বেতন দিয়ে রাখছি । আর আমার দেশের মা-বোনদের দিচ্ছি কয়েক হাজার মাত্র । তার উপর পুড়িয়ে মারছি, কখনো বিল্ডিং চাপা দিয়ে মেরে ফেলছি, কখনোবা লাশটায় গলে পচে যাচ্ছে অনেকটা মশা মাছির মতন । অথচ ভাবলে অবাক হবেন উন্নত বিশ্বে পরিবার কিংবা জন প্রতি একাধিক কুকুর আছে । যাদের দেখবাল কিংবা খাবার বাবদ মাসিক যে খরচ হয় আমার বিশ্বাস আমার দেশের অন্তত দুইটা গ্রাজুয়েট ফ্রেশ ইঞ্জিনিয়ারের মাসিক বেতনের চেয়ে কমনা বেশীই হবে (আমি এমন তুলনা আমাদেরকে কোনভাবেই ছোট করতে করছিনা বরং উন্নত জাতীর যথেচ্ছা খেয়াল খুশী আর বিলাশীতাময় জীবনের সাথে বাস্তবতার তুলনা করছি)। আমার মাঝে মাঝে চিন্তা হয় আমার দেশের মানুষের উপর এ কেমন অবিচার এ কোন অসমতা । নেদারল্যান্ডে দেখেছি কুকুরের জন্য বিশেষায়িত এম্বুলেন্স পর্যন্ত আছে । অর্থাৎ, কুকুর অসুস্থ হইলে সরকারী ভাবে তার সুচিকিৎসার ব্যাবস্থা আছে । সেখানে আমার দেশের মানুষের চিকিৎসার মান এবং সরকারের দায় দুটো বিষয়ে নতুন করে বলার কিছুই নাই । এবার ফিরে আসি গার্মেনটস প্রসঙ্গে । একটা ওয়াসিং এবং ডায়িং-এ যে পরিমান পানি ব্যাবহার হয় তার পরিমান গড়ে প্রতি ১ কেজি কাপড়ের বিপরীতে ২০০-৩০০ লিটার । তাহলে একবার ভাবুন আমাদের দেশের গার্মেন্টস রপ্তানীর পরিমান যত কেজি তার কমপক্ষে ২০০ গুণ পানি ফুরিয়ে যাচ্ছে প্রতিদিন । বিজেএমইএ যে লক্ষমাত্রা নির্ধারন করে যাচ্ছে প্রতি বছর তাতে আমাদের নেতা-নেত্রীগন যতটা খুশী হোউন না কেন আমরা যারা এর দীর্ঘ কালীন পরিবেশের ক্ষতি অনুধাবন করি তারা কোনভাবেই এহেন অপকর্ম চোখবন্ধ করে সমর্থন করতে পারিনা । তাই রপ্তানী গার্মেন্টসের সাথে কি পরিমান প্রতিদিন মুল্যবান ভুগর্ভস্ত পানি উঠাচ্ছি তার কথায় চোখ বন্ধ করে ভাবুন একবার । আপনি কি মনে করেন পানি একটি আনলিমিটেড রিসোর্স । তাহলে বলবো আপনি এখনো বোকার সর্গে বসবাস করছেন । আসলে পানি মানে সুপেয় পানি পৃথিবীতে লিমিটেড সোর্স (দুনিয়ায় এত পানি থাকলেও <১% এরও কম মানুষের ব্যাবহার যোগ্য সুপেয় পানি)। এর মানে খনি থেকে অন্য সব খনিজ পদার্থের মতই আমরা পানি তুলছি এইটা একটা সম্পদ যা একদিন ফুরিয়ে যাবে সেটা নিশ্চিত । এই মজুদ পানি যত বেশী ব্যবহার হবে ততই তাড়াতাড়ি সেটা ফুরাবে । এইটা বুঝতে রকেট সাইন্স জানতে হয়না । আমরা শুধু পানি উঠাচ্ছি যে তাইনা পক্ষান্তরে সেই পানিতে বিষ সমান কেমিক্যাল মিষিয়ে ছেড়ে দিচ্ছি নদী-নালা খালে- বিলে । এতে কোন প্রকার অনুশোচনা নেই কোন পক্ষের । কারন ব্যাবসায়ীরা তো মুনাফালোভী আর কার-ইবা ঠেকা পড়ছে পয়সা খরচ করে দুষিত পানি পরিশোধন করার । যেখানে একদিনের ট্রিটমেন্টের টাকার কিছু অংশ একজন পরিবেশ অধিদপ্তরের কর্মকর্তার পেছনে বিলালেই প্রভুভক্তি সেবা মিলবে । সব দুষন মুহুর্তেই পরিবেশ বান্ধব হয়ে যাবে অনেকটা কালো টাকা সাদা করার মতন । হ্যাঁ যেটুকু হচ্ছে সেও আবার যারা পন্য কেনেন মানে বড় বড় আন্তর্জাতিক ক্রেতাদের চাপে । সেটা যত ভালো উদ্যোগ হোউক না পক্ষান্তরে তাদের দেশের মানুষের কাপড়ের চাহিদা মেটাতেই তো আমরা আমাদের দেশের প্রাকৃতিক সম্পদের অপব্যবহার করে তাদের পোষাক বানাচ্ছি এবং তা ওয়াশও করে দিচ্ছি । সত্যিকার অর্থে আমরা প্রোফেসনাল ধোপা বৈকি । আর বিদেশী ক্রেতারা আমাদের কাছে বড় বাবু কিংবা সাহেব সমান । সব নোংরা রেখে যাবার আগে বিবেকের দহনে সাহেবরা হয়তো আমাদের কিছু টাকা টিপস হিসেবে দিয়ে যান উন্নয়নের নামে ।

এবার চামড়া শিল্পের কথায় আসি । এটিও উন্নত বিশ্বে একটি নিষিধ্য শিল্প । তার কারনও একিই। কাঁচা চামড়া প্রসেস করতে ক্রোমিয়ামের মত ক্যান্সার কারক ক্ষতিকারক কেমিক্যাল ব্যাবহার করা হয় । তাই ট্যানারির বর্জ্যপানি প্রকৃতিতে জীব বৈচিত্রের জন্য মারাত্মক হুমকির কারণ । এবার আসি বিস্তারিত আলোচনায় যেখানে আরও কিছু ভয়াবহ অবস্থার তথ্য মিলবে । বেশ কিছুদিন আগের কথা ট্যানারীর দুষন ঠেকাতে শুনেছিলাম কেন্দ্রীয় একটা ট্রিটমেন্ট প্ল্যন্ট হচ্ছে সাভারের হেমায়েতপুরে । সেখানে সরেজমিনে ফিল্ড ভিজিটে গিয়ে দেখি আরেক বিনোদন । এক আন্তর্জাতিক এক্সপার্টের মুখে শুনলাম রহস্যময় সেই ভয়াবহ দুর্নিতীর কথা । শুনেতো মনটাই খারাপ হয়ে গেল । তার কারন সেই প্ল্যান্টের ডিজাইনের প্রাথমিক অনুরোধ এসেছিল তার কাছেই কিন্তু ঐযে কিছু লেনদেন বিষায়ক বনিবনা না হওয়ায় সরকারী বড় কর্মকর্তাগন পরে এক চাইনিজ কোম্পনানীকে ৬৫০ কোটি টাকা দিয়ে প্ল্যান্টটি বানানোর কন্ট্রাক সাইন করেছেন । যে প্ল্যানটা বলতে গেলে অনেকটাই অকার্যকর । তার কারন, এই প্ল্যান্টে পানি আসার আগে প্রতিটা কারখানার নিজেস্ব ট্রিটমেন্ট ব্যবস্থায় দূষণের মাত্রা একটা সহনীয় পর্যায়ে নামিয়ে আনতে হবে । তানাহলে একেক ট্যানারীর দুষিত বর্জ্য একেক মানের হলে ট্রিটমেন্ট ব্যাবস্থা ব্যর্থ হবে । কথায় কথায় একটা মজার কথা মনে চলে আসলো । কিছুটা অসভ্যতা হোলেও না বলে আর পারছিনা । কথাটা হল এমন -আগে নোংরামি করতাম একেক জন একেক যায়গায় আর এখন চল সবাই মিলে পরিবেশ নোংরা করি একসাথে । অনেকটা দুষ্ট বন্ধুরা মিলে জামাতে রাতের শেষ ভাগে গ্রামের ইসলামী জালসা কিনবা যাত্রাপালা দেখে ফেরার সময় রাস্তার উপরে জামাতে মুত্র বিসর্জনের মত । কথাটা খারাপ লাগছে শুনতে কিন্তু এমুহুর্তে এর চেয়ে ভালো উদহরন মনে আসছেনা তাই বলে ফেললাম আর কি । আসলে এতো সবকিছুতেও কিছু আসে যায় না ইন্ডস্ট্রির মালিকদের অথবা অন্য যারা এহেন কর্ম কান্ড ঠেকানোর দায়িত্বে নিয়োজিত আছেন । তার প্রয়োজনই বা কি বলুন তাদের ভবিশ্যত ছেলে/মেয়রাতো আমার আপনার মত গরীব দেশে থাকেন না । এখানে একটা তথ্য যোগ করি আমি নেদারল্যান্ডসে থাকতে এমনকি হংকং-এও দেখছি প্রায় ১.৫ কোটি টাকার উপরে খরচা করে অনেক শিল্পপতি/নেতা-নেত্রীর ছেলে মেয়ে পড়তে আসছেন । অনেক সময় তাদের বাবা-মা মিলে টিউশন ফি দিতে ঘটা করে সপরিবার বিদেশ ভ্রমনেও আসেন । এইবার পলিউশন কন্ট্রোল করবে এমন তদারকি সংস্থার কথায় আসি । প্রথমত তাদের লোক বলের ভয়ানক সঙ্কট আছে । আর কিছু আসাদু কর্মকর্তা এত পাহাড় পরিমান টাকা বাইনাইছে যে তারাও তাদের প্রজন্মকে দেশের বাহিরে দিয়ে রাখছেন । এত টাকা আসলে রাখার যায়গায় তো নাই তাদের । আর তাদের উপরে যারা সদা সাদা পানজাবি পরিহিতা মানে পলিটিকস করে যাচ্ছেন তারাইবা কি নীতি প্রনয়ন করবেন । তারাইতো অনেকে অমন কয়েকটা শিল্প কারখানার মালিক । আবার সে শিল্পপতিদের দেয়া টাকায় তো নির্বাচনের খরচ আসে তার উপর মাঝে মধ্যে উতকোষ/মুনাফা তো আছেই । যেমন বড় ব্যাংক লোনের জন্য কিংবা কোন অফিসে ফাইল পাস করাতে হোলেই একে অপরের দ্বারস্থ না হয়ে উপায় আছে । তাই ভাগ যোগ করে তারা সবাই মিলে গিলে খাচ্ছে আমাদের দেশটাকে । চরম অপ্রিয় সত্য কথাগুলো অনেক তিতা লাগতেই পারে তবে দুঃখিত না বলে থাকতে পারলামনা ।

তবে পরিশেষে আমার বিদেশী ভাইদের পাঠানো ঘাম ঝরানো রেমিট্যান্স ব্যাতিত যত টেকষই উন্নতির কথাই বলিনা কেন তা আল্লাহ প্রদত্ত প্রাকৃতিক সম্পদ বিকিয়ে নির্দয় পাষাণের মত আমরা এগিয়ে যাচ্ছি অজানা এক আসীম গন্তব্যের দিকে । তাই হতাশায় হাতে হ্যারিকেন নিয়ে খুঁজছি জাতীয় বিবেক/আদর্শ তোমরা কোথায়?

বায়ু দূষণ মাপতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি!

গত সেমিস্টারে বায়ু দূষন নিয়ন্ত্রণ এবং ব্যবস্থাপনার উপর একটা কোর্স করতে গিয়ে এক জিনিয়াসের সাথে সাক্ষাত হল । তিনি হলেন প্রফেসর আলেক্সিস লাউ । এই ভদ্র লোক প্রিন্সটন বিশ্ববিদ্যালয় থেকে মাষ্টার্স এবং পিএইচডি সম্পন্ন করেন ১৯৯১ সালে । আর সেই থেকে HKUST তে কর্মরত । পৃথিবীর সেরা বিশ্ববিদ্যালয় গুলোতে অধ্যায়ন করা ব্যাক্তিগন কতটা মেধাবী হয় সেটা টের পেলাম ভদ্রলোকের ক্লাসে গিয়ে । যাহোউক এইবার ফিরে আসি মূল প্রসঙ্গে । তিনি বর্তমানে একটা প্রজেক্ট নিয়ে কাজ করছেন যেখানে প্রতিদিনের আবহাওয়া বার্তার মতই স্মার্টফোনে রিয়েল টাইম বায়ু দূষণ সংক্রান্ত তথ্য মিলবে । শহরের বিশেষ বিশেষ যায়গা গুলিতে বায়ু দূষন পরিমাপের সেন্সর বসানো থাকবে আর সেই সেন্সর গুলো একটি সেন্ট্রাল ডাটা সেন্টারের সাথে যুক্ত থাকবে । যেখান থেকে বৈজ্ঞানিক উপায়ে ডাটা প্রসেস করে তা পাঠানো হবে সাধারণ নাগরিকদের মুঠোফোনে । এতে ঘর থেকে কাজে বের হবার আগে আপনি বাতাসের অবস্থা জেনে বের হতে পারবেন । নির্দিষ্ট কোনদিনে আমরা যেমন রোদ কিংবা বৃষ্টির পুর্বাভাস আমাদের স্মার্টফোন গেজেটে দেখে নেয় ঠিক অনুরুপ । এক্ষেত্রে মোবাইল এ্যাপসটি আপনাকে রিয়েল টাইমে বাতাসে ভাসমান বিভিন্ন ক্ষতিকর পদার্থের মাত্রা জানাবে, সেই সাথে কি ধরনের প্রটেক্টিভ মাস্ক কিংবা অনুরূপ কিছু সাথে নিয়ে বের হবেন সে বিষয়েও তথ্য দেবে । শুধু তাই নয়, আপনার এই মুহুর্তে নির্দিষ্ট্য গন্তব্যে যেতে উক্ত মাত্রার দূষণে ঠিক কতক্ষণ খালি নাকে নিশ্বাস গ্রহন করলে আপনার কোন কোন রোগে আক্রান্ত হবার সম্ভবনা আছে সেটা সম্বন্ধে জানাবে । কিংবা, ঠিক কতটা সময় উক্ত দুষিত বাতাসে আপনার সর্বোচ্চ এক্সপোজার লিমিট সেটা বলবে । আর আপনাকে বিকল্প রাস্তাও দেখাবে যে পথে আপনি সেই একই গন্তব্যে পৌছাতে অপেক্ষাকৃত কম দূষণের সম্মুখীন হবেন ।

এইবার শেষ অংশে আরেকটু যোগ করি । এই অভিনব প্রযুক্তির কারিগরী গবেষনার প্রথম ধাপে যুক্ত আছেন প্রফেসর আলেক্সিস লাউয়ের অধীনস্ত একজন খাঁটি বাংলাদেশী (বাংলাদেশী বংশভুত নয় কিন্তু) পিএইচডি স্টুডেন্ট Shakhaoat Hossain ভাই । এইবার গুনি প্রফেসরের ছাত্র সম্বন্ধে একটু জানা যাক । Shakhaoat Hossain ভাই হলেন জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ের একজন তরুণ শিক্ষক । ব্যাচেলর এবং মাষ্টার্স দুইটায় জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয় থেকে এবং বেশ কিছু বছর সেখানে শিক্ষকতাও করেন । তার বিষয়ে শুধু একটা তথ্য যোগ করলেই যথেষ্ট হবে সেটি হল এই ভদ্রলোক HKUST-তে আসার আগেই নির্দিষ্ট্য সংখ্যক Elsevier এবং Springer-এ তার গবেষনার উপর প্রবন্ধ প্রকাশ করেছেন সেটাও খোদ বাংলাদেশে বসে, যেটা কিনা তার বিভাগে সর্বকনিষ্ঠ শিক্ষকের ঝুলিতে এখন পর্যন্ত সর্বোচ্চ অর্জন ।

জাগ্রত বিবেক আজ শ্রদ্ধায় নয় বরং লজ্জায় নতশির!

উচ্চ শিক্ষিত ব্যাক্তি মানেই সমাজে উচ্চ মানুষিকতা সম্পন্ন একজন বিবেকবান ব্যক্তিত্ব হিসেবে পরিচিতি পাওয়ার কথা। কিন্তু আমার সোনার দেশে শিক্ষার সর্বোচ্চ বিদ্যাপীঠে অপরাজনীতির জন্য আজকাল যা চলছে তার কাছে জাগ্রত বিবেক শ্রদ্ধায় নয় বরং লজ্জায় নতশির! আমার লিখার প্রসংগটা বোঝার জন্য নিচের ছোট দুইটা অংশ ধৈর্য্য নিয়ে কষ্ট করে পড়তে হবে ।

প্রথম অংশঃ হংকং গভার্নমেন্ট তাদের ৮ টা পাবলিক বিশববিদ্যালয়গুলোতে চাকুরীরত প্রফেসরদের বাৎসরিক পদমর্যাদা মুল্ল্যায়নের নিয়োমে কিছুটা পরিবর্তন আনতে যাচ্ছে শিঘ্রই। আগের নিয়োমে বছর শেষে একজন প্রফেসর কতগুলো হাই ইম্প্যাক্ট ফ্যক্টরড জার্নালে তাদের গবেষনাপত্র প্রকাশ করেছেন সে হিসেবে মুল্যায়ন করা হতো । নিঃসন্দেহে সেটাও সহজ ব্যাপার ছিলনা । তাছাড়া নির্দিষ্ট সখ্যাক রিপুটেড জার্নাল প্রকাশনার কোঠা পুরন করতে না পারায় অনেকের পদন্নতি থেমে আছে দীর্ঘদিন আবার অনেকে চাকুরী ছেড়ে হতাশা নিয়ে কর্মক্ষেত্র ছেড়ে ফিরে গেছেন । তেমনি একজন এসিস্ট্যান্ট প্রফেসরকে চোখের সামনে বিদায় নিতে দেখে মনে কিছুটা কষ্ট লাগলো । অথছ, তার মাস্টার্স এবং পিএইচডি ডিগ্রী University of Illinois Urbana-Champaign থেকে (যেটা কিনা USA এর সেরা দশ এর তালিকায় থাকা একটি বিশ্ববিদ্যালয়)। এছাড়া তার ব্যাক্তিগত পাব্লিকেশনের সঙ্খ্যা নেহায়েত কম নয় (বেশীরভাগ পাব্লিকেশন ASCE এর মত সনামধন্য Journal-এ) প্রকাশিত ।

নতুন নিয়োমে একজন ইউনিভার্সিটি প্রফেসরকে কতকগুলো স্টার পয়েন্টে বিবেচনা করা হবে (৫*, ৪*, ৩* এরকম আরকি-রেফারেন্সঃ কোর্স টিচার @HKUST)। যদি কেউ ফাইভ স্টার (সর্বোচ্চ পদ) প্রফেসর হিসেবে পদ পেতে চান তবে সেই প্রফেসরকে অন্তত একটা এমন টেকনোলজির উদ্ভাবক হতে হবে যেটা বাস্তব জীবনে অথবা শিল্পক্ষেত্রে ব্যবহৃত হচ্ছে । গাড়ি গাড়ি পাব্লিকেশন দিয়ে কি হবে যদি সে গবেষনার ফল মানুষের বাস্তব জীবনে কোন কাজেই না আসে । সত্যিই কথাটা যথেষ্ট যুক্তিসঙ্গত । আমার সেই কোর্সের প্রফেসরের ভাষায় “We are the university professors like scientific paper making machines”. তার উক্তিতে তিনি এটা বোঝাতে চেয়েছেন যে বেশীরভাগ বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রফেসরগন জার্নাল পেপার লিখা এবং পাব্লিকেশনে ওস্তাদ । তাই, অমন গবেষনার পেছনে যে লক্ষ লক্ষ টাকা খরচ করা হয় তা অনেকটায় ফলশুন্য ।

দ্বিতীয় অংশ: এবার আরো একটা চমৎকার তথ্য দিচ্ছি । তবে একটু ধৈর্য্য নিয়ে বাকিটা পড়ুন । গল্পের প্রসঙ্গঃ প্রফেসর মার্ক ফান লডসড্রেখট, ডেলফট টেকনিক্যাল ইউনিভার্সিটি, নেদারল্যান্ডস-এ প্রফেসর পদে পদন্নতি পাবার গল্প । ভদ্রলোক এসোসিয়েট প্রফেসর পদে ছিলেন বেশকিছু বছর । মাঝে তরুন এই গবেষক 'এনামক্স' নামক এক বিশেষ ধরনের খুদ্র অনুজীব আবিস্কার করেন যেটা শিল্প- বর্জ্যপানি পরিষোধনের জন্য বিশেষভাবে কার্যকরী এবং বর্তমানে প্রযুক্তিটি নেদারল্যান্ডে শিল্পক্ষেত্রে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হচ্ছে । তার এই অভাবনীয় আবিষ্কার এবং নিয়োমিত গবেষনায় সফলতার জন্য্ তাকে ইউরোপিয়ান ইউনিয়ান বিশেষ সম্মানে ভুষিত করে। তার এহেন অভিনব গবেষনার সফলতা অবলোকন করে তৎকালীন তার বিভাগের প্রধান খুশি হয়ে বিশববিদ্যালয়ের প্রেসিডেন্টের সাথে ব্যক্তিগত বৈঠক করলেন এবং প্রেসিডেন্টের সাথে ড. মার্ককে কিভাবে ফুল প্রফেসর পদে পদোন্নতি দেয়া যায় সে বিষয়ে আলোচনা করলেন । কিন্তু এতে একটা সমস্যা দেখা দিল সেটা হলো- ডাচদের নিয়োমে একটা বিভাগের অধীনে একেক সাব-ডিভিশনে (এরিয়া অব স্পেশিয়ালাইজেশনে) শুধু একজন ফুল প্রফেসর থাকবেন । তার কারন ফুল প্রফেসর একটি অত্যন্ত উচ্চ পদমর্যাদার আসন । এমনকি সেখানে একজন ফুল প্রফেসর পার্লামেন্টের মন্ত্রীর সমপর্যায়ে ক্ষমতা প্র্যাক্টিস করতে পারেন । সে অনুযায়ী এই তরুন প্রতিভাবান সহপাঠীকে প্রফেসর পদে পদোন্নতি দিতে গেলে সে বিভাগীয় প্রধানকে স্বেচ্ছায় পদ ছেড়ে নিম্ন পদে নেমে যেতে হবে । এমতবস্থায় বিভাগীয় প্রধান সেচ্ছায় তার পজিশন ছেড়ে দিতে রাজিও ছিলেন । তবে, আরো একটা অপশন ছিলো সেটা হলো সৌভাগ্যক্রমে সিভিল ইঞ্জিনিয়ারিং এর আরেকটা সাব ডিভিশনে প্রফেসর পদ খালি ছিল । বিধায় স্যানিটারী ইঞ্জিনিয়ারিং এর প্রফেসরশীপ ছেড়ে প্রেসিডেন্টকে বিশেষ আনুরোধ করলেন যাতে ড. মার্ককে তার-ই পদে প্রফেসর হিসবে পদন্নতি দেয়া হয় । এইতো গেল গল্পের চমৎকার একাংশ । গল্পের বাকিটা আরো বেশী চমৎকার । যে সময় এমন আয়োজন চলছিল তখন ড. মার্ক দেশের বাহিরে কোন এক কনফারেন্সে নেতৃত্ব দিচ্ছিলেন । এইবার প্ল্যান করা হলো সবকিছুই হবে ড. মার্কের অজান্তে । কারন একটায় তাকে আকস্মিকভাবে চমকে দেওয়া । আর সে জন্য তার একান্ত সেক্রেটারীকে ডেকে ড. মার্কের ইমেইল থেকে আপডেটেড CV প্রিন্ট করা হলো । ড. মার্কের পক্ষে পদন্নতির জন্য একটা দরখাস্তও রেডি করা হলো । সেই সাথে সর্বসম্মতি নিয়ে তার স্বাক্ষর পর্যন্ত নকল করা হলো । তার অফিস রুম থেকে সব কিছু স্থানান্তর করা হলো সাবেক প্রফেসরের রুমে । খুব সুন্দর করে ডেকোরেট করা হলো এবং সবশেষে রুমের সামনে নামের আগে প্রফেসর লিখা একটা নেইমপ্লেটও ঝুলানো হলো । এই সবকিছু ড. মার্কের কাছে একেবারেই অজানা ছিল । কনফারেন্স শেষে ড. মার্ক দেশে ফিরে এসে এতসব আয়োজন দেখে চমকে গেলেন । তিনি শুধু অবাক হচ্ছিলেন এই ভেবে যে উনিতো কোন পদন্নতির জন্য আবেদনই করেন নাই । পরে সবকিছু খুলে বলা হয় এবং অফিশিয়াল প্রক্রিয়ায় তাকে উক্ত পদে পদন্নোতি দেয়া হয় । এই হলো একজন উচ্চ শিক্ষিত বিবেকবান মানুষের আদর্শ । যেখানে আমার সোনার দেশে পাবলিক বিশ্ববিদ্যালয়ের গুরুতবপুর্ন একটা পদের জন্য কিনবা ভিসি পদের জন্য প্রফেসরদেরকে সকল নীতি-নৈতিকতা ভুলে রাজনৈতিক নেতাদের কাছে সর্বস্য বিসর্জন দিতে দেখা যায় । সেখানে পদ ছেড়ে সহপাঠিকে তার যোগ্যতার বিচারে সম্মান প্রদর্শন তো অতিব কল্পনা মাত্র । তাই সেই সকল উচ্চ শিক্ষিত ডক্টরেট প্রফেসর নামধারী শিক্ষকতা পেশার অবমাননাকারীদের দিকে তাকালে শ্রদ্ধায় নয় বরং ঘৃণাভরে লজ্জায় মাথা নত হয়ে আসে ।

বিঃদ্রঃ প্রফেসর মার্কের গল্পটি একটা সত্য ঘটনা মজার ব্যাপার হলো নেদারল্যান্ড থাকা কালীন আমি উনার ডাইরেক্ট স্টুডেন্ট হয়েও গল্পটা জানতাম না কিন্তু, আমার চলমান একটা কোর্স টিচার প্রফেসর চ্যান আমাদের ক্লাসে বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রফেসরদের পদন্নতি নিয়ে এক প্রসঙ্গে বেশ গর্বভরে গল্পটা বলছিলেন তার কারন প্রফেসর মার্ক তার একজন অত্যন্ত ঘনিষ্ট বন্ধু

চাল-বাজি, অনুজীব বিদ্যা আর বাংলাদেশের রাজনীতি! এই তিনে মিল কোথায় ?

১৮-নভেম্বর-২০১৭

টা যদি মিরাক্কেলের মঞ্চ হতো তবে ডেফিনেটলি মীরের সাথে কলরবে ব্যান্ডেজ দল চিৎকার করে বলে উঠতো, ......কো..থা..য়? তাহলে এইবারে বলছি শুনুন । ছোটবেলায় আমরা বাজি ধরতাম দেয়াশলাইয়ের কাঠি অথবা ১ দানা চাল নিয়ে । ব্যাপারটা ছিল এরকম- আমি আমার বন্ধুরে বললাম আমাকে ৫০ বার চালের দানা বা দেয়াশলয়ের কাঠির মতো সহজলভ্য জিনিস দিতে হবে, বিনিময়ে আমি তাকে বেশ দামী কিনবা আকর্শনীয় একটা উপহার দেব । আরেকটু পরিস্কার করে বলি, এই ধরুন আমাকে ৫০ বার চালের দানা দিলে বিনিময়ে আমি আপনাকে একটা লেটেষ্ট মডেলের আইফোন দিব । তবে শর্ত হোল, আপনি প্রথমবার যতটুকু দেবেন পরের বার তার দিগুন দিতে হবে । আপনি যদি সর্বনিম্ন ১ টা চালের দানা দিয়েও শুরু করেন তবে ২, ৪, ৮, ১৬, ৩২ এই ক্রম্ননয়ে দিতে থাকতে হবে ৫০ রাউণ্ড । অনেকের কাছে বিষয়টা এখন অবদি অনেক সহজ মনে হতে পারে । ধরুন আপনি ভাবছেন, এ আর কতই হবে বড় জোর ১০ মন চাল দিলেও বর্তমান বাজার দরে ২০০০ টাকা প্রতি মন হিসেবে ১০ মন চালের আনমানিক বাজার মুল্য ২০,০০০ টাকা । তাও খারাপ না যদি তার বিনিময়ে ৮০ কিনবা ৯০ হাজার টাকার মুল্যের নতুন আইফোন পেয়ে যান, ঠিকতো? এবার চলুন হিসেব কষে দেখি; কি পরিমান মাশুল গুনতে হবে আপনাকে । এবার আমার এই চাল নিয়ে বাজি মানে চাল-বাজির ব্যাপারটা বোঝার জন্য নিচের দেয়া চিত্র-১ এবং চিত্র-২ -এ মনোযোগ দিয়ে লক্ষ্য করুন ।

এতক্ষন আমরা দক্ষতার সাথে হিসেবে কষে চালের সংখ্যা নির্ধারন তো করলাম । তবে এবার ঝটপট উক্ত চালের আনমানিক বাজার মুল্য নির্ধারন করে ফেলি চলুন । তার আগে ১ টি চালের দানার ওজন বের করতে হবে । একটি চালের শুকনো দানার ওজন প্রায় ০.০১৬ গ্রাম হিসেবে [রেফেরেন্স] ৬২,৫০০ টি চালের দানা মিলে হয় ১ কেজি । তাহলে ৫০ তম রাউন্ড শেষে আপনার দেয়া চালের পরিমান ১,১২৫,৯৯৯,৬৮৪,৬২০ টি চালের দানার হিসেবে ওজন দাঁড়াবে আনমানিক ১.৮ কোটি মেট্রিক টন । ২০০০ টাকা প্রতি মন হিসেবে এক মেট্রিক টনের (১ মেট্রিক টন = ১০০০ কেজি = ২৫ মন, ৪০ কেজিতে মন হলে) দাম হবে ২৫*২,০০০ = ৫০,০০০ টাকা । তার মানে দাড়ালো ১.৮ কোটি মেট্রিকটন চালের বাজার মুল্য প্রায় ৯০ হাজার কোটি টাকা । এইবার বোধহয় আপনার সাভাবিক বোধ শক্তি ফিরে আসলো । তাহলে একটা আইফোন বিনিময়ে চাল-বাজি না খেলে আপনি হয়তো খুব সহজে অ্যাপেল কোম্পানীর মালিকানা কিনে ফেলতে পারবেন । আরেকটা উদহারন দেয়- গত ২০১৭-২০১৮ অর্থ বছরে বাংলাদেশের মোট বাজেটের প্রস্তাব ছিল প্রায় ৪ লক্ষ ২ শত ৬৬ কোটি টাকা [রেফেরেন্স] । তাহলে এইবার অন্তত খুব সহজে বুঝে গেছেন যে উক্ত চালের দামে বাংলাদেশের মত দেশের মোট বাজেটের ২২% ঘোষনা করা সম্ভব ।

যাহোউক, ফিরে আসা যাক আমাদের আরেকটি মজার প্রসঙ্গে । তাহলে অনুজীব বিদ্যার সাথে এই চাল-বাজির যোগসুত্র কি? তাইতো? তবে বলছি শুনুন, আসলে উপরে যে প্রক্রিয়ায় চালের বৃদ্ধি দেখানো হলো মানে ১ থেকে ২ তারপর দুই থেকে ৪ এমনিভাবে ৮, ১৬, ৩২ ...। আসলে এই একি প্রক্রিয়ায় অনুজীব মানে ক্ষুদ্র ব্যাক্টেরিয়া বংশ বিস্তার ঘটায় । আর সেটিকে মাইক্রোবায়োলজিতে বাইনারী ফিশন বলে । এ প্রক্রিয়ায় একটি মাত্র কোষ থেকে এভাবে ব্যাকটেরিয়া বাইনারী ফিশন প্রক্রিয়ায় হাজার হাজার কোটি কোটি সঙ্খ্যায় রুপ নিয়ে থাকে । আর এই প্রক্রিয়ায় বায়োটেকনোলজিস্টরা ব্যাক্টেরিয়াকে মানবজীবনের বহু উপকারী কাজে ব্যাবহার করছেন । সহজ উদহারন দিয়ে যদি বলি তাহলে পাউরুটির কথা সবার আগে আসে । যদিও পাউরুটি তৈরিতে ব্যবহার করা হয় ইষ্ট নামক আরেক ধরনের ক্ষুদ্র অনুজীব কিন্তু বংশ বিস্তারের প্রক্রিয়া একই । আবার যতরকম মদ আছে সেগুলি তৈরীতেও ব্যাকটেরিয়া ব্যবহার করা হয় (ফারমেন্টশন প্রক্রিয়ার চালিকা শক্তি হিসেবে)। আরো সহজ করে যদি বলি যেমন- শিল্প কারখানার বর্জ্য পরিশোধনের সবচেয়ে বহুল প্রচলীত এবং সল্পব্যায়ী পদ্ধতির নাম ‘এক্টিভেটেড স্লাজ’ ট্রিটমেন্ট, যেখানে আসলে ব্যাক্টেরিয়াকে ব্যবহার করা হয় শিল্প বর্জ্যের দুষিত পদার্থ দূর করতে প্রধান চালিকা শক্তি হিসেবে (মেইন ওয়ার্ক ম্যানশীপ) । ব্যাকটেরিয়া দুষিত পানি থেকে পচনশীল সকল অপদ্রব খেয়ে ফেলে আর বিনিময়ে তারা বংশ বিস্তার করে খুব দ্রততার সাথে । যেখানে একটা ব্যাক্টেরিয়ার সাইজ খালি চোখে দেখা যায়না (১০-১০০ মাক্রন, তার মানে ১ মিলিমিটারকে ১ হাজার ভাগে ভাগ করলে যে পরিমান হয় তাকে বলে ১ মাইক্রন)। তাহলে আপনার কাছে মনে হতে পারে এত ক্ষুদ্র অনুজীবেরা আবার কিভাবে পানি থেকে দুষিত পদার্থ দূর করতে সক্ষম । আসলে সঙ্খায় তারা আগের সেই চালের ১ দানা থেকে ট্রিলিয়ন ট্রিলিয়ন বৃদ্ধির মতই এতো এতো বেশী হারে জন্মায় যে এত ক্ষুদ্র হবার পরেও তাদের সম্মিলিত কাজের ফল আমাদের নানাভাবে উপকার করে থাকে । মজার ব্যাপার হলো অনুজীববিদ্যা বিজ্ঞানের আরেকটা বিশাল অজানা জগত । একবার ভাবুনতো, এখন পর্যন্ত মানুষ মাত্র ১% অনুজীব সম্মন্ধে জানতে সক্ষম হয়েছে আর বাকি ৯৯% আমাদের কাছে এখনো অজানা । আরেকটা সুন্দর তথ্য দেয় আপনাদের । সমুদ্রের মাঝে যে ক্ষুদ্র মাইক্রো এলগি নামক সবুজ উদ্ভিদ আছে তারা কিন্তু বেঁচে থাকার জন্য পৃথিবীতে আমাদের নির্গত কার্বন-ডাই-অক্সাইড গ্রহন করে বিনিময়ে আমরা তাদের কাছ থেকে পাই ফ্রেশ অক্সিজেন । ঠিক গাছের মতই তারা আমাদেরকে অক্সিজেনের যোগান দিয়ে যাচ্ছে অবিরাম কিন্তু চোখে দেখা যায়না বলে তাদের কথা হয়তো সেভাবে ভাবা হয়না কখনো ।

যাহোউক, তবে সবশেষে ফিরে আসা যাক আমার লম্বা শিরনামের শেষভাগে । আসলে আমাদের উপরের দুইটা প্রক্রিয়ায় বৃদ্ধির হারের সাথে আমাদের দেশের রাজনিতিবিদ্দের সম্পদ বৃদ্ধিতে একটা চমৎকার মিল পাওয়া যায় । তারা যখন এলাকায় ছোট নেতা থাকে মানে যখন তাদের সেই অনুজীবের মত মাইক্রস্কোপে দেখলেও রাজনৈতিক পরিচয় তেমনভাবে খুঁজে পাওয়া যায়না । কিন্তু ঠিক যখনি তারা একবার সংসদ নেতা হিসেবে জনগনের মননীত হয়ে যান কিনবা মন্ত্রী হিসেবে আসন পেয়ে যান পরমুহুর্তে তাদের সম্পদের বৃদ্ধি ঠিক যেন বাইনারী ফিশন কিনবা সেটাকেও ছাপিয়ে বৃদ্ধি পেতে তাকে হাজার গুনিতকে । সে অস্বাভাবিক সম্পদ বৃদ্ধির হারকে হয়তো ম্যাথমেটিক্সের আভিধানে খুজেও পাওয়া যাবেনা । তবে এক্ষেত্রে নতুন একটা শব্দ অন্তর্ভুক্ত করার জন্য বাংলা একাডেমিকে প্রস্তাব দেয়া যেতে পারে । যেমন ধরুন ‘বাইনারী ফিশন’ না বলে রাজনৈতিক ব্যাক্তিবর্গের সম্পদের বৃদ্ধির হারকে বলা যেতে পারে ‘পলিফিশন’ ।

সামাজিক নেটওয়ার্কিং অ্যাপগুলি কি তবে?

November 8, 2017

প্রযুক্তির দ্রুত পরিবর্তনের সাথে পাল্লা দিয়ে আমাদের আধুনিক জীবন যাপন ব্যাস্ত থেকে ব্যাস্ততর হয়ে পড়ছে । এমতবস্থায় আমাদের সামাজিক সম্পর্কগুলি জীবিত রাখার জন্য আমরা হাজার কর্মব্যাস্ত সত্তেও কিছুটা সময় বের করছি । তবে তা সারশূন্য এবং ফ্যাকাশে বলতে পারেন । তার কারন, আমরা সত্যিকারের অনুভূতিগুলো প্রকাশ না করে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপগুলির সাহায্য খুব সহজেই নিজেদের সামাজিকতা রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছি । একদিকে সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে আমরা সময় সাশ্রয় করছি বটেই কিন্তু অন্যদিকে আমাদের মনের আসল আবেগ অনুভূতি লুকিয়ে মিথ্যা আবেগ মাখানো কথার ফুলছুড়ি দিয়ে অনুভুতি প্রকাশে উৎসাহিত হচ্ছি । আমাদের চারপাশে যা ঘটছে তা কেবল লোক দেখানো, এক ধরনের 'আনুষ্ঠানিকতা' মাত্র । উদাহরণস্বরূপ, বন্ধুর কিনবা প্রিয় মানুষকে জন্মদিনের শুভেচ্ছা জানানো এবং অবাক করে দেয়া একটা গিফট দেয়া ছিল এক সময়ের প্রথা । একসময় আপনি যদি সত্যিকার অর্থে ভালোবেসে কাউকে তেমনটি করতে চাইতেন তবে হাজার কর্মব্যাস্ততার ফাঁকে একগুচ্ছ ফুল আর উপহার হাতে নিয়ে হাজির হতেন একান্তে কিছু সময় প্রিয় মানুষটির সান্নিধ্যের আশায় । ফুল আর উপহারের চাইতে আপনার উপস্থিতি কিন্তু প্রধান আকর্ষনের কেন্দ্রবিন্দুতে ছিল আর সেটি একে আপরের সম্পর্কের সেতু-বন্ধন সুদৃঢ় করতে সহায়কও ছিল বটে । হিসেব করে দেখলে তখন হয়তোবা বন্ধু বান্ধবীর সংখ্যা তুলনামূলক কম ছিল । কিন্তু এখনকার জন্মদিনে এনিমেটেড কার্ড, কেক, ইমোজি পাঠিয়ে আপনি হৃদয়ের গভীরে সেরকম কোন তৃপ্তি অনুভব করেননা । পাশাপাশি, শুভেচ্ছা এবং উপহার কার্ড কোনভাবেই আপনার উপস্থিতির সাথে তুলনীয় হতে পারেনা । আজকাল, আপনার সোশ্যাল নেটওয়ার্কিং অ্যাপ্লিকেশন যেমন- ফেসবুক, টুইটার, ইন্সটাগ্রাম, আপনাকে সেই বিশেষ ইভেন্টগুলির কথা সহজেই স্মরণ করিয়ে দিচ্ছে এবং আপনাকে ভার্চুয়াল কার্ড, কেক, ইমোজিস ইত্যাদি পাঠাতে সাহাযা করছে । কিন্তু এতে ভালোবাসা ভরা কিনবা আবেগ মাখা অনুভুতির কোন অস্তিত্ত নেই । আবার আমি যদি বলি আজ সকালে বন্ধুদের দেয়া ফেইসবুক পেইজে বিশেষ কোন পোস্টের জন্য আপনার অনুভূতি প্রকাশ ছিল পুরোটাই আবেগহীন এবং মিথ্যে । তবে কি সেটা ভুল বলা হবে । একবার চোখবন্ধ করে ভাবুনতো আপনার সর্বাধিক জনপ্রিয় মন্তব্যগুলি: যেমন-’খুব সুন্দর’, ‘বুদ্ধিমান’, ‘বাহ দারুণ তো!’ কিনবা 'বুড়ো আগুল তুলে বিশাল একটা লাইক প্রদান, এইগুলির বেশিরভাগই মিথ্যে ছিল, তাই নয় কি? এছাড়াও, ‘আমি তোমাকে ভালোবাসি জানু’, ‘এ মুহূর্তে আমি তোমাকে খুব মিস করছি’, ‘এই দিলাম তোমায় একটা উড়ন্ত চুমু’ এসবকিছু বড় বেশী লোক দেখানো যা আমরা প্রায়সই প্রিয় মানুষকে খুশি করতে সোস্যাল নেটোয়ার্কিং অ্যাপগুলির মাধ্যামে করে থাকি । অধিকাংশ সময় আমাদের ব্যক্ত করা এধরনের প্রতিক্রিয়ার সাথে মনজগতে গভীরে আবেগ অনুভুতির সাথে কোন সম্পর্ক থাকছেনা । সুতরাং, আমাদের ভার্চুয়াল জগতে অনুভূতি প্রকাশের সাথে আমাদের মধ্যে ভালোবাসা তথা সামাজিকতার বড় উন্নয়ন হচ্ছে এমন ভাবার কোন যুক্তি নেই । এমনকি এই পন্থায় সামাজিক সম্পর্কের উন্নয়ন আশা করাও ভুল । এইভাবে আমরা আমাদের একে অপরের প্রতি স্নেহ-ভালোবাসা দেখানোর অভ্যেস শুধু প্রথাগত ভাবে বজায় রাখার চেষ্টা করছি । হৃদয়ের গহীনে প্রকৃত অনুভুতির বহিঃপ্রকাশ উহ্য রেখে বাহিরের খোলশে মোড়া সস্তা অনুভুতি যাহির করে চলেছি । সুতরাং, ঘুম থেকে উঠে বিছানায় শুয়ে স্মার্ট ফোনটা হাতে নিয়ে নোখের খোঁচায় এক সঙ্গে অনেকগুলি বন্ধুকে পুর্বে থেকে সংরক্ষিত কতকগুলো মেসেজ, গিফট কার্ড এবং ইমিজি পাঠানোকে একধরনের রুটিন জব করে ফেলেছি । আর যাইহোক, এই ভার্চুয়াল দুনিয়ার সোস্যাল নেটোয়ার্কিং এ্যাপ্স দিয়ে নিজেকে খুব বেশী সামাজিক করে তোলার যতই প্রচেষ্টা চলুক তাতে 'সামাজিক' শব্দটির প্রকৃত অর্থ না বুঝে আমরা আমদের পারিবারিক (স্ত্রী-সন্তান) কিনবা প্রিয় বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে চুটিয়ে আড্ডার সময়গুলোকেও স্মার্ট ফোনের স্ক্রিনে আবদ্ধ করে ফেলছি । আজ পাঁচজন একসাথে হোলে অন্তত তিনজনকে তাদের স্মার্ট ফোন নিয়ে ব্যাস্ত থাকতে দেখা যায়, তবে কতক্ষন পর পর হ্যাঁ বা না বলে সাঁয় দেয় যে সে তাদের সাথেই আছে । আবার অফিস থেকে ফিরে স্বামী-স্ত্রী তে কথা বলার চাইতে তাদের নিজ নিজ অঙ্গনে ভার্চুয়াল দুনিয়ায় ব্যস্ত থাকতে দেখা যায় । কখনো বা এই প্রযুক্তির উন্নয়ন আর আমাদের আধুনিকতার স্বীকার সেই ছোট্র কোমলমতি শিশুটি যে কিনা তার বাবাকে বলেছিল সে যদি তার মেয়ে না হয়ে একটা স্মার্ট ফোন হতো তবে বাবার কাছে বেশী সময় পেত । তাই, আমার মনে হয় আমরা হাজার হাজার ভার্চুয়াল বন্ধু-বান্ধবীদের সাথে নেটয়ার্কিং করে অতিমাত্রায় সামাজিকতা দেখাতে গিয়ে নিজেদেরকে অজান্তেই কিছুটা 'কম সামাজিক' করে ফেলছি ।

A True Message from an Eminent Professor

September 4, 2017

This morning, I enjoyed the insightful talks by an eminent professors at HKUST. In his lecture, he uttered a wonderful statement that I liked very much. He said, “When I was a child, my mom used to say, ‘Humans can conquer against nature’, but gradually when I became an adult and finished my post-doctoral study, soon I realized it’s a wrong statement. Humans never ever be able to conquer nature. Why? Modernization—whatever the form maybe—it is always against the nature. You cannot show a technology or man-made development work which has no side-effect at all. Some of them are having less, or some of them are with major impacts on their surrounding nature. Some of their impacts on nature have already been discovered, or some of them yet to be discovered. There is no doubt we are destroying our mother planet with the name of modernization. But, the priority should have been given to the green hills, fresh rivers, natural landscapes, etc., rather to the so-called economic development and money. So, unless you find a place on the other planet like the Moon or Mars, our existence as a human being is vulnerable at some points. And indeed, we are going toward the final day. There is no doubt about it, we are counting down toward the end of our universe. Interestingly, still we are the researchers with false hopes that even we are growing it every day for our better future and a better 'sustainable environment'—the most imaginary concept. In the name of sustainability, intelligent people are practicing so many things in unsustainable ways. For instance, in order to arrange a global summit or making a successful gathering of experts, scientists, global leaders, etc., we are hosting several summits with some names like—SMART City, Resilient City, Sponge City, these are all false hopes, but still, we are a human being, we love to dream, so we are dreaming. That is also a mysterious thing in our lives, and we love to live with it. Still, we all set alarms in our clocks though we are not pretty much sure that we will be alive tomorrow. That is the best example of how we are living in the world with false hopes, is not it?” After that, he proceeded to his lecture.